প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় ভাল করার কৌশলঃ গনিত
( শতকরা )
অভিজিৎ বসাক
বিসিএস( প্রশাসন)
৩৩তম বিসিএস
এই অধ্যায়টির সাথে লাভ বা ক্ষতি অধ্যায়টি সম্পর্কযুক্ত। তাই আলোচনার সুবিধার্থে দুইটি বিষয় নিয়ে একসাথে আলোচনা করা হয়েছে। আলোচনার শুরুতে যে বিষয়টি জানা দরকার, “শতকরা” কাকে বলে। অন্যভাবে বলতে গেলে ১০০ ভাগের কত ভাগ। অর্থাৎ, আমরা যখন বলি, ১০% বা 10% percent, আমরা বুঝিয়ে থাকি, কোনকিছুর ১০০ভাগের ১০ভাগ। একইভাবে ২০% দিয়ে আমরা বুঝিয়ে থাকি, ১০০ভাগের ২০ভাগ।
এবার যদি আপনাকে বলা হয়, ২০টাকার ১০% কত, তাহলে আপনাকে যা বলা হয়েছেঃ ২০ টাকার ১০০ ভাগের ১০ভাগ কত টাকা?
যখন এটা বলা হবে, তখন বুঝতে হবে, ২০ টাকার মধ্যে ১০০ ভাগ লুকিয়ে আছে। তাহলে ২০ টাকার মধ্যে যদি ১০০ ভাগ লুকিয়ে থাকে, ২০ কে ১০০ দিয়ে ভাগ দিলেই তো আমরা ১ ভাগ পেয়ে যাবো, তাইনা! হ্যা, আপনি ঠিক ধরেছেন। এই ১ ভাগ করে বলা হয় ১%। এবার এই ১% এর মানকে আপনি যদি ১০ দিন গুন দিয়ে দেন, তবে ১০ ভাগ বা ১০% পেয়ে যাবেন। বুঝতে সমস্যা হচ্ছে না আশা করি। এবার আমরা একে গাণিতিকভাবে প্রকাশ করার চেষ্টা করে দেখি।
10% of TK 20
= 10% of 20
= 10/100×20= 2
এবার আপনি এই বিষয়টি লাভ-ক্ষতির ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারবেন। যদি বলা হয়, কোন একটি জিনিস ২০ টাকায় কিনে ১০% লাভে বিক্রয় করা হলে লাভ কত টাকা?
আপনি একইভাবে বলতে পারবেন, লাভ ২ টাকা।
এবার ধরুন, আপনি একটি জিনিস ২০ টাকার ক্রয় করেছেন। তাহলে ক্রয় মূল্য = ২০ টাকা। ১০% লাভে বিক্রয় করলে কত টাকা লাভ হবে?
এক্ষেত্রে বলা যায় আগের সূত্রটি একটু ঘুরিয়ে বললে নিচের মত হবে-
ক্রয়মূল্য ×(লাভ বা ক্ষতির হার)/১০০ = লাভ বা ক্ষতির পরিমান
এবার অন্যদিকে যাওয়া যাক। আপনি এখন ২ টাকা লাভ পেয়েছেন। তাহলে তো আমরা খুব সহজে বিক্রয়মূল্য বের করতে পারি। কারন আমরা জানি, বিক্রয়মূল্য = ক্রয়মূল্য + লাভ বা –ক্ষতি
তাহলে এই এই বিষয়টি যদি আমরা শতকরার মাধ্যমে প্রকাশ করি
ক্রয়মূল্য = ১০০%
লাভ = ১০%
তাহলে বিক্রয়মূল্য = ১০০% + ১০% = ১২০%
তাহলে তো আমরা বলতে পারি, যদি ক্রয়মূল্য ১০০% হয়ে থাকে, তবে ক্রয়মুল্যকে ১০০ দিয়ে ভাগ দিলে ১% পাওয়ার পর একেবারে ১২০ দিয়ে গুন দিলেই ১২০% পেয়ে যাব, তাই তো! এই বিষয়টিকে আমরা নিচের মত করে সূত্র হিসেবে প্রকাশ করতে পারি।
ক্রয়মূল্য × ((১০০ + লাভের হার) বা(১০০ - ক্ষতির হার))/১০০ = বিক্রয়মূল্য
তাহলে, দেখুন, উপরের ফর্মুলা থেকে নিচের ফর্মুলাতে যাওয়া যায় কিনা।
বিক্রয়মূল্য × ১০০/((১০০+লাভের হার)বা(১০০-ক্ষতির হার) ) = ক্রয়মূল্য
আশা করি, বুঝতে সমস্যা হয়নি।
এবার আমরা আরেকটু ভিন্ন আলোচনা করতে যাচ্ছি। ধরুন, আপনি একটি জিনিস ২০ টাকায় কিনে ১০% লাভে বিক্রয় করলেন সুমনের কাছে। সুমন সেই জিনিসটি তারেকের কাছে বিক্রয় করেছে ১০% লাভে। এবার তারেকের ক্রয়মূল্য বের করতে হবে। যদি আগের আলোচনা ভালোভাবে বুঝতে পারেন, তবে এটা বুঝতে পেরেছেন, যে সুমন জিনিসটি কিনেছে ২২ টাকা দিয়ে। কারন আপনি ২০ টাকার উপর ২ টাকা লাভ করেই সুমনের কাছে বিক্রি করেছেন। তাই সুমনের কাছে জিনিসটির ক্রয়মূল্য ২২ টাকা।
অর্থাৎ, আপনার বিক্রয়মূল্য = সুমনের ক্রয়মূল্য
এবার সুমনে যেহেতু তারেকের নিকট ১০% জিনিসটি বিক্রি করেছে, তাহলে সে কিন্তু তার নিজের ক্রয়মূল্যের উপর ১০% লাভ করবে। তাহলে সুমন কিন্তু চিন্তা করবে ২২ টাকা তার ক্রয়মূল্য এবং এটিই তার কাছে ১০০% হিসেবে বিবেচিত হবে। তাই এখন যদি আগের মত ২২ টাকাকে ১০০ দিয়ে ভাগ করে ১০ দিয়ে গুন করা হয়ে তবে সুমনের লাভের পরিমান পাওয়া যাব = ২২× ১০/১০০ = ২.২ টাকা। তাহলে সুমন তারেককে জিনিসটি ২২ + ২.২ = ২৪.২ টাকায় বিক্রি করবে। অর্থাৎ তারেক জিনিসটি কিনবে ২৪.২ টাকায়। এবার নিচের ফ্লোচার্টটি ভালোভাবে দেখুন।
আপনার ক্রয়মুল্য = ২০ (১০০%) --- আপনার বিক্রয়মূল্য = ২০×১১০/১০০ = ২২ (সুমনের ক্রয়মূল্য)
সুমনের ক্রয়মুল্য = ২২ (১০০%) --- সুমনের বিক্রয়মূল্য = ২২×১১০/১০০ = ২৪.২ (তারেকের ক্রয়মূল্য)
অন্যভাবে বলা যায়, ২০×১১০/১০০×১১০/১০০=২৪.২
আর এখানে খেয়াল করুন, প্রতি ক্ষেত্রে লাভের হার ১০%। মূলত এখান থেকেই successive profit or loss percentage এর উৎপত্তি। কারণ,
২০×১১০/১০০×১১০/১০০
=২৪.২ কে ২০×(১১০/১০০ )^২
= ২০×((১০০+ ১০)/১০০ )^২
একটু ঘুরিয়ে বলতে পারি, ১০% এর জায়গায় যদি বলা হয় r% লাভ, তাহলে সমীকরণটি হবে নিচের মত।
২০×((১০০+ r)/১০০ )^২
তাহলে যদি বলা হয়, x টাকার একটি জিনিস পর পর n বার r% লাভে বিক্রয় করা হয় তবে বিক্রয়মূল্য হবে
= X ×((১০০+ r)/১০০ )^n
আচ্ছা, ক্ষতি হলে কী হবে? তেমন কিছুই না, কেবল কষ্ট করে r এর আগে বিয়োগ চিহ্ন দিলেই হয়ে যাবে।
তখন সূত্রটি হবে = X ×((১০০ - r)/১০০ )^n
বিদ্রঃ এই সূত্র দুইটি তখন প্রয়োগ করা যাবে যখন একই হারে মুনাফা, ক্ষতি হবে।
খেয়াল করলে বুঝতে পারবেন, এই সূত্রটি চাইলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য বা কমে যাওয়ার জন্যও কিন্তু প্রযোজ্য হবে। ধরুন, বলা হয়েছে, একটি দেশে জনসংখ্যা ২০ জন প্রতি বছর ১০% করে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলে ৫ বছর পর কত হবে?
উত্তরঃ ২০×((১০০+ ১০)/১০০ )^৫ = ৩২.২১ জন।
এই সূত্রটি চাইলে কোন জিনিসের মূল্যের অবচয় নির্ণয় করতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
একটি যন্ত্র ২০ টাকা দিয়ে কেনার পর প্রতিবছর ১০% করে দাম কমতে থাকলে, ৫ বছর দাম কত হবে?
উত্তরঃ আগের মতই করা হবে, কিন্তু বিয়োগ করার বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে = ২০×((১০০- ১০)/১০০ )^৫ = ১১.৮০ টাকা
বুঝতেই পারছেন, একটি সূত্র চাইলে নানাভাবে ব্যবহার করা যায়।
এইভাবে প্রতিটি সুত্রকে চাইলে ব্যাখ্যা দিয়ে শিখলে মনে রাখতা সুবিধা হবে।
সময়কে কাজে লাগিয়ে পড়াশুনা চালিয়ে যান। সফলতা আসবেই।
লেখা সংক্রান্ত যেকোনো পরামর্শের জন্য আমার ইনবক্সে টেক্সট করতে পারেন। ফেইসবুক আইডি- Avizit Basak
“ Without your involvement you can`t succeed. With your involvement you can`t fail.” -A.P.J. Abdul Kalam
বি দ্রঃ লেখাটাতে শুধু আমার নিজের আইডিয়া অনুযায়ী ধারণা দেয়া হয়েছে। আপনি আপনার মত করেও প্রস্তুতি নিতে পারেন। সফল হবার জন্য যে প্রস্তুতি দরকার, সেটা সম্পন্ন করাটাই মুখ্য কাজ।আর ছোটখাটো ভুল থাকলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন দয়া করে।