আজকে আমি আলোচনা করবো ভাইভার ড্রেসকোড নিয়ে। শুনতে হাস্যকর লাগতে পারে, কিন্তু ভাইভার আগে যে অপ্রয়োজনীয় টেনশনগুলো আপনার মাথা জ্যাম করে রাখবে তার মধ্যে অন্যতম হল এই ড্রেসকোড। কী পরা যাবে-কী যাবে না, কী পরবো- কী পরবো না- এসব চিন্তা করতে করতেই আপনার দু'একটি দিন চলে যাবে। সত্যি কথা বলতে কি, নিজের চয়েসকে ডিফেন্ড করতে পারলে জিন্সটিশার্ট পরে গেলেও আপনার ভাইভা তারা নিবে। তবে এসব না পরাই উত্তম। ছেলেরা যারা পারবেন ফরমাল গেটআপে যাবেন। ফুলহাতা সার্ট, ফরমাল প্যান্ট এবং একজোড়া পরিস্কার স্যু হলেই গেটাআপের সিংহভাগ পরিপূর্ণ হয়ে যায়। একটা টাই আপনার এই গেটাআপেকে দিতে পারে অন্য মাত্রা। যেকোন কালারের সার্ট পরতে পারেন, তবে সাদা, হালকা নীল, আকাশী,হালকা গোলাপি, অ্যাশ এর মতো হালকা রং এর হলেই ভালো হয়। রক্তলাল, ক্যাটকেটে সবুজ বা হলুদের মত দৃষ্টিকটু রং পরিহার্য। এক কালারের সার্ট হলে বেশি ভালো হয় তবে চেক বা স্ট্রাইপও পরা যাবে নির্ভয়েই। সার্ট অবশ্যই ইন করে পরবেন। হাল্কা কালারের সার্টের সাথে ডিপ কালারের প্যান্ট পরার নিয়ম। কালো, নেভিব্লু, ডিপ-গ্রে বা কালচে-খয়রি এক্ষেত্রে বেস্ট অপশন হতে পারে। সার্ট প্যান্টের সাথে টাই পরতে চাইলে মার্জিত কালারের টাই পরবেন। কালো, নীল, আকাশী এই ক্ষেত্রে বেস্ট চয়েস। টাই পরলে অবশ্যই টাইপিন পরবেন, তা নাহলে বসার সময় টাই নড়ে যাবে এবং দৃষ্টিকটু দেখাবে।
ছেলেরা সবচেয়ে খুঁতখুঁতে থাকে স্যু এর চয়েস নিয়ে। কালো স্যু পরা ভালো তবে ব্রাউন পরলেও খুব একটা ক্ষতি নেই। কালো রং এর অক্সফোর্ড স্যু (ফিতেওয়ালা) হলে সবচেয়ে ভালো হয়, তবে এ কথাও ঠিক যে অন্যন্য ফরমাল স্যু পরেও অনেকে ক্যাডার হয়েছে। তবে লোফার, পাম্প স্যু, কেডস্ বা সেন্ডেল না পরাই ভালো। নতুন জুতা হলে ভালো হয়। পুরাতন জুতা পরতে চাইলে আগের দিন কালি করে চকচকে করে রাখবেন। হাঁটার সময় যেসকল জুতার তলা থেকে খটখট আওয়াজ হয় সেসব স্যু না পরাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
অনেকেই ফরমাল গেটআপ হিসেবে কম্প্লিট কিংবা ব্লেজার পরতে পছন্দ করেন। সরকারী নিয়ম অনুসারে বাংলাদেশে মার্চ থেকে আগস্টের শেষ পর্যন্ত সামার সেশন এবং সেপ্টেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত উইন্টার সেশন ধরা হয়। তাই উইন্টার সেশনে আপনি চাইলেই কম্প্লিট পরে যেতে পারেন। তবে স্যুটেড বুটেড হয়ে ভাইভা দিতে গিয়ে দরদর তরে ঘামতে থাকলেও সেটা দেখতে ভালো লাগবে না। কম্প্লিটের রং হিসেবে কালো এবং নেভিব্লু সবচেয়ে বেশি গ্রহনযোগ্য। কম্প্লিট পরলে অবশ্যই টাই পরতে ভুলবেন না। কোট বা ব্লেজার পরুন আর না পরুন অবশ্যই জুতার সাথে কালার ম্যাচ করে কোমরের বেল্ট পরতে ভুলবেন না যেন।
যাদের পাঞ্জাবী বা যুব্বা পরার অভ্যাস আছে তাঁরা উপরে বর্ণিত ফরমাল ড্রেসে কমফোর্ট না হলে পরার দরকার নাই। আপনারা মার্জিত কালারের পাঞ্জাবী পরে যেতে পারেন। শীতকাল হলে উপরে কোটি পরবেন এবং অবশ্যই পায়ে জুতা পরে যাবেন। এ ক্ষেত্রে বলা ভালো, ছেলেদের যারা দাড়ি রাখেন তারা দাড়ি নিয়েই ভাইভা দিতে পারবেন। তবে যাদের সেভ করার অভ্যাস আছে তারা অবশ্যই পরীক্ষার দিন সকালে ক্লিনসেভ করবেন। খোঁচাখোঁচা দাড়ি বা ট্রিম করে না যাওয়াই ভালো।
ড্রেসআপ নিয়ে মেয়েদের সমস্যাটা সবচেয়ে বেশি। থ্রিপিছ না শাড়ি? বোরকা না হিজাব? এসব ডিসাইড করা বড়ই ঝামেলা হয়ে দাঁড়ায়। মেয়েরা চাইলে যেকোন কিছুই পরতে পারেন। তবে বেশিরভাগ মেয়ে শাড়িটাকে বেশি প্রিফার করে। ফরমাল ড্রেস হিসেব মেয়েদের জন্য শাড়ির বিকল্প খুঁজে বের করা আসলেই কঠিন। কিন্তু যাদের শাড়ি পরার অভ্যাস নাই তাদের বরং থ্রিপিছ পরে যাওয়াই ভালো। কারন শাড়ি পরে ব্রাউনিয়ার মোশানে হাঁটতে দেখাটাও দৃষ্টিসুখু নয় মোটেও।
যারা শাড়ি পেতে চান তারা মার্জিত কালারের, যেমন সাদা, আকাশি, ঘিয়া, হালকা বাদামি, হালকা নীল, হালকা সবুজ রং এর শাড়িগুলো পরতে পারেন। লাল, খয়রির মতো ডিপ কালারের শাড়িগুলো এভোয়েড করাই ভালো। নিজে শাড়ি পরা জানলে তো ভালো তবে সুযোগ হলে এক্সপার্ট কারও সাহায্য নিবেন, সুযোগ থাকলে পার্লার থেকে শাড়ি পরে নিতে পারেন। অনেকেই শাড়ির উপর ব্লেজার পরেন। এতে আপনার ফরমাল রুকটা সিম্পলের উপর গর্জিয়াস দেখাবে। থ্রিপিছওয়ালারা যেকোন মার্জিত কালারের থ্রিপিছ পরতে পারেন। তবে পালাজ্জো বা জিন্স পরে যাবেন না।
যারা বোরকা বা হিজাব করেন তারা যদি শাড়ি বা থ্রিপিছ-এ সাচ্ছন্দ না হন তবে বোরকা বা হিজাব পরেই যেতে পারেন। এক্ষেত্রেও কালার টা মার্জিত হতে হবে। যারা নেকাব করেন তাদের অবশ্যই মুখ খুলে যেতে হবে। হিজাব বা বোরকা পরলে সমস্যা নাই, তবে "কেন হিজাব বা বোরকা পরেন?" প্রশ্নটির সম্মুখীন হতে পারেন। সুন্দর গ্রহনযোগ্য একটা উত্তর তৈরি রাখুন এখনই।
মেয়েরা চাইলে খুবই হালকা মেকআপ করতে পারেন। চুল সুন্দর করে বেঁধে যাবেন, পারলে পার্লার থেকে বেঁধে যাবেন। কোন ধরনের অর্নামেন্টস পরবেন না। তবে চাইলে হাতঘড়ি পরতে পারেন। পায়ে জুতা বা সেন্ডেল যা ইচ্ছা পরতে পারেন। খুব উঁচু হিল বা পেন্সিল হিল না পরাই ভাভ। খেয়াল রাখবেন হাঁটার সময় যেন জুতা থেকে খটখট আওয়াজ না হয়।
ছেলে এবং মেয়েরা অবশ্যই সাথে হাতঘড়ি, কলম, এবং রুমাল রাখবেন। খুবই হালকা পারফিউম ব্যাবহার করতে পারেন। তবে যাই হোক না কেন কমফোর্ট না ফিল করলে কোন কিছু পরবেন না। আসলে আপনার গেটআপ ভাইভাতে আপনার নম্বর বাড়াতে পারবে না কংবা কমাতেও পারবে না। তবে একটা সুন্দর ড্রেস যে কাজ টা করবে তা হল আপনার কনফিডেন্স বাড়িয়ে দিবে।
সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন এবং কনফিডেন্সের সাথা ভাইভাবোর্ড ফেস করার চেষ্টা করবেন। অনেক অনেক শুভকামনা আপনাদের জন্য।
ডাঃ মোঃ পারভেজ ইউসুফ
সহকারী ডেন্টাল সার্জন
৩৭ তম বিসিএস