পাক ভারত যুদ্ধ তুলনামূলক বিশ্লেষণ :
সম্প্রতি দক্ষিণ এশিয়া সহ সারা বিশ্বের চোখ পাক ভারতের দিকে,এর সাথে জড়িত কয়েক লাখ কোটি টাকার ব্যবসা আর আধিপত্য বিস্তারের নেশা।
অনেকের আগ্রহ আছে এই বিষয়ে,চেস্টা করলাম সহজভাবে তুলে ধরতে।বিসিএস এর জন্য এই লেখা পড়া লাগবে না,তবে এমনিতে পড়তে পারেন
যুদ্ধ কি আসন্নঃ
---------------------
যুদ্ধের সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। গতকাল পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ভারতের সাথে আলোচনায় বসার আহবান আর সংবাদ সম্মেলনে সুর নরম করাই তার প্রমাণ। মূলত যুদ্ধ হলে বেশি ক্ষতি হবে পাকিস্তানের। কারণ পাকিস্তান এমনিতেই জঙ্গি সমস্যায় জর্জরিত, অর্থনীতিও অনেক ভঙ্গুর।অপরদিকে ভারতের অর্থনীতি অনেক সমৃদ্ধ,৬ষ্ঠ বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ।
(যদিও কিছু লোক অনাহারে আছে,আরও কিছু সমস্যাও আছে,এটাও সত্য)।
তবে যুদ্ধ হলে তার খেসারত ভারতকেও দিতে হবে।উঠতি অর্থনীতির দেশ হিসেবে ভারত এই বোকামি করবেনা।আবার পাকিস্তানও যুদ্ধ করে নিজের ধ্বংস ডেকে আনবে না।তাই সত্যিকার অর্থে কেউ যুদ্ধে আগ্রহী নয়।বর্তমান বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও অর্থনীতির যুগে যুদ্ধ করে নিজের পায়ে কুড়াল মারবে না।
তবে কি যুদ্ধের সম্ভাবনা একেবারেই নেই?
------------------------------------------------------------
ভারত বরাবরই খুব কৌশলি খেলোয়াড়,সে এমনভাবে খেলে যাতে সাপও মরবে না,লাঠিও ভাঙবে না।কাজেই ভারত বুঝেশুনে আগাবে।এক্ষেত্রে পাকিস্তান বোকামি না করলে যুদ্ধ হবে না।তবে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী আসলে সরকারের নিয়ন্ত্রণে কখনোও ছিল না,এখনও নাই।আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধেই এটার স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়, কাজেই তারা যদি ইমরান খানের কথা না শোনে তবে যুদ্ধের সম্ভাবনা নাকচ করে দেয়া যায়না।তবে ইমরান খান যথেষ্ঠ বুদ্ধিমান এবং পরিপক্ক রাজনীতিবিদ,সে বুঝে শুনেই আগাচ্ছে।তাই যুদ্ধের সম্ভাবনা নাই বা থাকলেও ১০-২০% বলা যায়।এখন পর্যন্ত দুই দেশই ফাঁকা বিমান হামলা ছাড়া কিছুই ঘটায়নি।এটাকে যুদ্ধ না বলে ঝগড়া বলা যায়।
যুদ্ধ হলে কি হবে?
------------------------
যুদ্ধ কখনওই ভাল ফলাফল বয়ে আনেনা,যুদ্ধ মানবতার শত্রু।কাজেই এই যুদ্ধ কখনওই ভাল কিছু করবে না।সামরিক বেসামরিক বেশ কিছু মানুষ মরবে,সবচেয়ে বেশি মরবে নারী,শিশু।সব যুদ্ধে এরাই বেশি নিহত হয়।আর বিশ্ব অর্থনীতিতে বিরুপ প্রভাব পড়বে।সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হব আমরা, যেহেতু ভারতের সাথে আমাদের ২য় বৃহত্তম অর্থনৈতিক লেনদেন।কাজেই আমাদের চাওয়া হবে যুদ্ধ না হোক,যুদ্ধ হলে আমাদের র্অথনীতির অনেক ক্ষতি হবে।
বিশ্ব পরাশক্তি সমূহ কোন পক্ষঃ
----------------------------------------------
বিশ্ব পরাশক্তি সমূহের কথা বলতে গেলে প্রথমেই আসবে অর্থনৈতিক অবস্থানের কথা।যুদ্ধ বিগ্রহ বলেন আর রাজনীতি বলেন,যাই বলেন দুনিয়া চলে অর্থের উপর।স্টিভ জবস বলেছেন ' ব্যক্তি অর্থ ছাড়া এক পাও চলতে পারে না' কথাটি সম্পূর্ণ যৌক্তিক।কাজেই বিশ্ব পরাশক্তিগুলো কে কাকে সমর্থন দেবে তা নির্ভর করছে অর্থের উপর মানে লাভের উপর।এক্ষেত্রে দুই দেশের প্রতিবেশী দেশ এশিয়ার চীন ব্যতীত বাকি দুই শক্তি হল রাশিয়া আর আমেরিকা।স্পষ্টত আমেরিকা ভারতের পক্ষে, যেহেতু আমেরিকা ভারতের পক্ষে সেহেতু বলা যায় চীন পাকিস্তানের পক্ষেই থাকবে,অন্যভাবে বলা যায় যেহেতু চীন পাকিস্তানের পক্ষে সেহেতু আমেরিকা ভারতের পক্ষে থাকবে।রসিকতা হলেও সত্য আমেরিকা আর চীন পরস্পরের বিপক্ষে অবস্থান নেয়।এখন বাকী রইল রাশিয়া।রাশিয়া সাধারণত আমেরিকার বিপক্ষে থাকে আর চীনের পক্ষে থাকে নিজের লাভের জন্য। সেই যুক্তিতে রাশিয়া পাকিস্তানের পক্ষে থাকার কথা, কিন্তু এক্ষেত্রে বিষয়টা ভিন্ন,কারণ ভারত রাশিয়ার বন্ধু রাষ্ট্র।পাকিস্তানের সাথে সেই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকেই রাশিয়ার সম্পর্ক খারাপ,এরপর রয়েছে সোভিয়েত ইউনিয়ন বাঙন পরবর্তী সংকটে পাকিস্তান বিভিন্ন ভাবে রাশিয়ার বিপক্ষে ছিল।ভারত অনেক বৃহৎ অর্থনীতির দেশ আর পাকিস্তান ভঙ্গুর অর্থনীতির দেশ এটাও একটা কারণ,গায়ে পড়ে কেউ দুর্বলের পক্ষ নেয় না।এই হল পরাশক্তি গুলোর অবস্থান।
মুসলিম বিশ্ব কার পক্ষেঃ
----------------------------------
বিষয়টা তো আসলে ইসরাইল ফিলিস্তিনের মত কোন ধর্ষবিষয়ক সমস্যা বা যুদ্ধ নয়,তাই এক্ষেত্রে মুসলিম বিশ্ব কার পক্ষে তা ভাবাটাই অবান্তর।কারণ পাকিস্তান ইসলামিক রাষ্ট্র হলেও ভারতে পাকিস্তানের চেয়ে মুসলমান সংখ্যা বেশি।আবার ভারত কাগজে কলমে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র।গতকালের পত্রিকায় দেখা গেছে ভারতের মসজিদের সামনে হিন্দু মুসলমান একত্রিত হয়ে মিস্টিমুখ করেছে ভারত পাকিস্তানে হামলা করেছে এই আনন্দে।আসলে বিষয়টা হিন্দু মুসলমান দ্ধন্দ্বে হিসেবে রূপ দিয়েছে বাংলাদেশ ভারতের অনলাইন নিউজে না বুঝে মন্তব্য করা কিছু বাঙালি।এটা মূলত দুটি দেশের লড়াই আর একটি অসহায় জনগোষ্ঠী কাশ্মীরিদের লড়াই।
তারপরও দেখা যাক শক্তিশালী মুসলমান রাষ্ট্র গুলোর ভূমিকা কী----+
সৌদি আরবের মত মুসলিম পরাশক্তি ভারত পাকিস্তান দুই দেশকেই অর্থ আর অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করেছে,করছে,করবে।সৌদি বাদশাহ তো পাকিস্তানকে যেমন অর্থ সাহায্য দেয়,তেমনি ভারতের সাথেও তার অস্ত্রসহ বিভিন্ন ব্যবসা আছে।সৌদি আরব মোটামুটি দুই নৌকায় পা দিয়ে রাখছে।সৌদি বাদশাহ পাকিস্তানকে অর্থ সাহায্য দিয়ে আবার ভারত সফর করে মোদিকে বড় ভাই সম্বোধন করাই তার প্রমাণ। আর ইরান মোটামুটি পরোক্ষ ভাবে ভারতের সাথে আছে,এক্ষেত্রে ইরানের সাথে অতীতে পাকিস্তানের খারাপ সম্পর্ক খারাপ না হলেও তেমন একটা ভাল নয়,আর তাছাড়া ভারতের সাথে ইরানের ব্যবসায়িক লেনদেন আছে।এর কারণ হল।এক্ষেত্রে আরও একটি বিষয় গুরুত্বপূর্ন, আফাগানিস্তান রাষ্ট্রকে ভারত বিভিন্নভাবে সহায়তা করে,আর্থিক, রাজনৈতিক।আর পাকিস্তানের অনেক সন্ত্রাসবাদী আফগানিস্তানে আশ্রয় নেয় যার কারণে আফগানদের বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয়।এসব কারণে আফগানিস্তান পরোক্ষভাবে ভারতের পক্ষে। বাকী ইসলামি দেশগুলো কার্যত নিশ্চুপ,তারা অতীতেও নিশ্চুপ ছিল, এর কারণ
মুসলিম বিশ্ব এই স্পর্শকাতর ইস্যুতে কারও পক্ষ নিতে চায় না।
ইসরাইল কেন ভারতের পক্ষেঃ
-------------------------------------------
এক্ষেত্রে যদিও অনেকে বলবে ধর্মীয় বিভাজন।,তবে আমার ব্যক্তিগত মত হল ক্ষমতা আর অর্থনীতি।তবে একথাও অস্বীকার করার উপায় নাই মুসলিম বিশ্বের অভ্যন্তরীণ সমস্যার জন্য ইসরাইল আর আমেরিকা অনেকাংশে দায়ী।কাজেই এক্ষেত্রে আমেরিকার সহপাঠী হিসেবে ইসরাইল ভারতের পক্ষে।আর ভারতের সাথে ইসরাইলের অনেক বড় ব্যবসায়িক সম্পর্ক তো আছেই,যা মূলত অস্ত্র ব্যবসা।তাই ব্যবসাটাই এখানে মূল নিয়ামক।তবে ধর্মীয় বিষয়টাও মাথায় রাখতে হবে কারণ পাকিস্তান মুসলমান রাষ্ট্র, ইসরাইল তাই মুসলমান রাষ্ট্রের পক্ষে থাকবে না।
দুই দেশের শক্তির তুলনামূলক আলোচনা:
ক্ষেপণাস্ত্র ও পারমাণবিক অস্ত্রঃ
--------------------------------------------
ভারত ও পাকিস্তান দুটি দেশই ক্ষেপণাস্ত্র ও পারমাণবিক অস্ত্র ক্ষমতাসম্পন্ন। ভারতের ৯ ধরনের সচল ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে।
অপরদিকে সিএসআইএস বলছে, পাকিস্তানে এধরণের ক্ষেপণাস্ত্র কার্যক্রম চালু রয়েছে। এর মধ্যে ভ্রাম্যমাণ ছোট ও মাঝারি পাল্লার আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে যেগুলো ভারতের যেকোনো অংশে পৌঁছাতে পারে।
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মতে, পাকিস্তানের ১৪০-১৫০টি পরমাণুবাহী যুদ্ধাস্ত্র রয়েছে। অন্যদিকে, ভারতের রয়েছে ১৩০-১৪০টি।
সেনাবাহিনীঃ
----------------- ভারতের সেনাবাহিনীর সদস্য সংখ্যা ১২ লাখ। এর জন্য রয়েছে ৩ হাজার ৫৬৫টি যুদ্ধ ট্যাংক, ৩ হাজার ১০০ পদাতিক বাহিনীর যুদ্ধযান, ৩৩৬টি সাঁজোয়া যান ও ৯ হাজার ৭১৯টি আর্টিলারি।
অন্যদিকে, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী তুলনামূলক ছোট। দেশটির সেনাবাহিনীর ৫ লাখ ৬০ হাজার সদস্যের জন্য ২ হাজার ৪৯৬টি ট্যাংক, ১ হাজার ৬০৫টি সাঁজোয়া যান, ৪ হাজার ৪৭২টি আর্টিলারি গান ও ৩৭৫টি স্ব-চালিত হ্যালোজার্স রয়েছে।
ক্ষেপণাস্ত্র সহ বিমান,নৌবাহিনীসহ সব কিছুতে সংখ্যায় ভারত বেশি হলেও পাকিস্তানও সামরিকভাবে যথেষ্ঠ শক্তিশালী দেশ,কেউ কাওকে ছেড়ে কথা বলবে না।তবে এ যাবতকালে তিনটিই যুদ্ধেই পাকিস্তান পরাজিত হয়।
তবে যাই হোক না কেন একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে ব্যক্তিগতভাবে আমি চাই কাশ্মীর স্বাধীন হোক।এই দুই দানবের সামরিক যাঁতাকলে পিষ্ঠ হয়ে ৭০ বছর যাবত নিরীহ মানুষগুলো নির্যাতিত হচ্ছে।সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি কাশ্মির যেন বাংলাদেশের মত মুক্তির সাধ পায়।
★★এই লেখাটি বিভিন্ন ওয়েবসাইট এবং দেশি বিদেশি পত্রিকার লেখা বিশ্লেষণের মাধ্যমে আমার ব্যক্তিগত মতামত।এক্ষেত্রে গঠনমূলক মন্তব্য গ্রহণযোগ্য।আবেগের বশে কোন মন্তব্য না করার জন্য অনুরোধ রইল।
NILOY SEN GUPTA