বিসিএস ভাইভায় জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন: গোলাম আজমকে কি ভাষা সৈনিক বলা যাবে?
----------------------------------------------------------
উত্তর:
গোলাম আযম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ বা ডাকসু'র জিএস ছিলেন ১৯৪৯ সালে।
তখন ডাকসু'র ভিপি ছিলেন অরবিন্দ বোস।
১৯৪৮ সালের ২৭ নভেম্বর পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের এক সমাবেশে ভাষণ দেন।সেখানে ছাত্ররা একটি মানপত্র পাঠ করেন। ওই মানপত্রে বাংলা ভাষা নিয়েও কিছু দাবি জানানো হয়।এই দাবিসম্বলিত স্মারকলিপিটি দিয়েছিলেন জিএস গোলাম আযম।
তার এই ভূমিকাকে বিশেষভাবে তুলে ধরা হয় জামায়াতের পক্ষ থেকে।
সে সেময় ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় বামপন্থী রাজনীতিক বদরউদ্দিন উমর পরে এ নিয়ে গবেষণাও করেছেন।
তিনি বলেছেন, 'হিন্দু কোন ছাত্রকে দিয়ে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের কাছের স্মারকলিপি পেশ করা হলে ,তার ভিন্ন ব্যাখ্যা হতে পারে। সে কারণে তখন ডাকসু'র ভিপি অরবিন্দ বোসকে বাদ দিয়ে জিএস গোলাম আযমকে দিয়ে স্মারকলিপি পেশ করা হয়েছিল'।
★ বদরউদ্দিন উমরের বক্তব্য অনুযায়ী, বাংলা ভাষা আন্দোলনে ভূমিকা রাখার বিষয়টি ভুল ছিল বলেও গোলাম আযম পরে মন্তব্য করেছিলেন।
এ প্রসঙ্গে অগ্রগণ্য ভাষাসৈনিক কামাল লোহানীও বলেন–
‘‘গোলাম আযম কখনোই ভাষাসৈনিক ছিলেন না। স্বাধীনতাবিরোধীরা তাকে ওটা বানাতে চেয়েছে। কৌশলগত কারণে ভিপি অরবিন্দকে বাদ দিয়ে গোলাম আযমকে দিয়ে স্মারকলিপিটি লিয়াকত আলী খানকে দেওয়া হয়েছিল। এটুকুই তার ইতিহাস। তারপর আর গোলাম আযম ভাষার লড়াইয়ের ইতিহাসে নেই।’’
এছাড়াও বাংলা এবং বাঙালি জাতি নিয়ে গোলাম আযমের বিদ্বেষ পরবর্তীকালে তারঅনেক উক্তিতেই পাওয়া যায়। যেমন, ১৯৭০ সালের এপ্রিল মাসে তিনি বলেছিলেন, ‘জয় বাংলা শ্লোগান পাকিস্তানবিরোধী’। তিনি সে সময় আরও বলেছিলেন, ‘‘বাঙালিরা কখনও জাতি ছিল না।’’
[দৈনিক পাকিস্তান, ১৩ এপ্রিল, ১৯৭০]
স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, বাংলা ভাষা আর বাঙালি জাতির প্রতি যার এত প্রেমের নমুনা, তিনি কেনই-বা প্রধানমন্ত্রীর সামনে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে দাবি করলেন?
আমাদের বুঝতে হবে সেদিনের ঘটনাপ্রবাহ। তিনি নিজেই বলেছেন, তিনি সে সময়ের অনির্বাচিত জিএস ছিলেন এবং মানপত্র পড়ার বিষয়টি ছিল একটা আকস্মিক ঘটনা মাত্র। এমনকি তিনি সেই মানপত্র নিজে লিখেননি, লিখেছিলেন তৎকালীন সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের ভিপি আবদুর রহমান চৌধুরী। তারপর একটি কমিটি স্মারকলিপিটি চূড়ান্ত করে। সেদিন স্মারকলিপি পাঠ করা ছাড়া তার কাছে আর কোনো রাস্তা খোলা ছিল না। যদি তিনি তা থেকে বিরত থাকতেন কিংবা অনাগ্রহী হতেন, তাহলে সাধারণ ছাত্রদের হাত থেকে তাকে কেউ রক্ষা করতে পারত না। কারণ ছাত্ররা তৎকালীন শাসকগোষ্ঠীর ওপর মারাত্মক বিরক্ত ছিল।
সবশেষে আমরা দেখব ভাষা আন্দোলনের পরবর্তী সময়গুলোতে গোলাম আযমের ভূমিকা।
১৯৭০ সালের ২০ জুন একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় দৈনিক ‘আজাদ’ পত্রিকার পঞ্চম পৃষ্ঠায়। “বাংলা ভাষার আন্দোলন করা ভুল হইয়াছে” শিরোনামের সেই লেখায় গোলাম আযমের বক্তব্য প্রকাশিত হয়। দেখুন তার বক্তব্য–
সেই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়–
“বাংলা ভাষা আন্দোলন পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার দৃষ্টিকোণ থেকে মোটেই সঠিক কাজ হয়নি।”
[দৈনিক আজাদ, ২০ জুন, ১৯৭০]
কাজেই গোলাম আযম কোনোক্রমেই ভাষাসৈনিক নন। এভাবে তাকে পরিচিত করানোর ব্যাপারটি আসলে তাকে মহিমান্বিত করার অপকৌশল মাত্র
তথ্যসূত্র : BBC Bangla,blog, Wikipedia