আজকে স্যারের জন্মদিন।প্রথমেই স্যার সম্পর্কে কিছু চমকপ্রদ তথ্য দেই,এরপর হয়ত এত বড় লেখা পড়ার আগ্রহ জাগবে
★তিনি গাণিতিক সমস্যার জন্য কখনও ক্যালকুলেটর এবং কম্পিউটার ব্যবহার করেননি
★ ২০০১ সালে পৃথিবী ধ্বংসের গুজবকে গাণিতিক সমীকরণ দিয়ে মিথ্যা প্রমাণিত করে বিশ্ববাসীকে স্বস্তি দান করেন
★ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হবার অনুরোধ সবিনয়ে ফিরিয়ে দেন শুধুমাত্র গবেষণা করার জন্য
★ সাহিত্যনুরাগী ছিলেন,ভাল পিয়ানো বাজাতেন, ভাল গানও গাইতেন
★প্রতি মাসের বেতনের একটা বৃহৎ অংশ গরীবদের দান করতেন
★ব্রিটিশ সরকারকে চিঠি লিখে মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা বন্ধে পদক্ষেপ নিতে বলেন
বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের মধ্যে মৌলিক বিজ্ঞানে তাঁর মতো অবদান আর কারও নেই। তেমনি বিশ্ব বিজ্ঞানের সারস্বত সমাজে তাঁর মতো সমাদর ও খ্যাতিও কারও ছিল না। এই বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী প্রফেসর জামাল নজরুল ইসলামের জন্ম আজকের দিনে, তাঁর বাবার কর্মক্ষেত্র ঝিনাইদহে ২৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৯ সালে,পৈত্রিক সূত্রে বাড়ি চট্টগ্রাম।মাতা পিতা কাজী নজরুল ইসলামের ভক্ত হওয়ায় তাঁর সাথে মিল রেখে উনার নাম রাখা হয়।
শিক্ষাজীবনঃ
------------------
জামাল নজরুল ইসলামের স্কুলজীবন শুরু হয় কলকাতায়, সেখান থেকে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে কিছুদিন, শেষে পাকিস্তানের লরেন্স কলেজ থেকে সিনিয়র কেমব্রিজ পাস করেন। বিএসসি সম্মান ডিগ্রি অর্জন করেন কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে। এরপর বৃত্তি নিয়ে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিতে ট্রাইপজে তিন বছরের কোর্স দুই বছরে শেষ করেন। ১৯৬০ সালে কেমব্রিজ থেকেই মাস্টার্স। ১৯৬৪ সালে এখান থেকেই প্রায়োগিক গণিত ও তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।
এরপর ড. ইসলাম অত্যন্ত দুর্লভ ও সম্মানজনক ডক্টর অব সায়েন্স বা ডিএসসি ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন।
শিক্ষকতা জীবনঃ
-------------------------
জামাল নজরুল ইসলাম যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ডক্টরাল ফেলো ছিলেন,এরপর ক্যালটেক বা ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে ভিজিটিং অধ্যাপক ছিলেন
লন্ডনের কিংস কলেজে ফলিত গণিতের শিক্ষক, কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ে সায়েন্স রিসার্চ ফেলো এবং সিটি ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনা করেছেন।
মাতৃভূমির টানে ফিরে আসাঃ
-----------------------------------------
১৯৮৪ সালে প্রফেসর ইসলাম তাঁর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিলেন। পশ্চিমের উন্নত দেশে ৩০ বছরের অভ্যস্ত জীবন, সম্মানজনক পদ, গবেষণার অনুকূল পরিবেশ, বিশ্বমানের গুণীজন সাহচর্য এবং লাখ টাকার লোভনীয় চাকরি ছেড়ে দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে দেশে ফিরে এলেন। এলেন একেবারে নিজ জেলা চট্টগ্রামে। অতি দামি চাকরি ছেড়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত বিভাগে যোগ দিলেন মাসিক তিন হাজার টাকা বেতনে।
সত্যিকার এই দেশপ্রেমিক দেশে ফিরে এসে জামাল নজরুল ইসলাম গড়ে তুলেছেন উচ্চতর বিজ্ঞান গবেষণাগার আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠান গাণিতিক ও ভৌতবিজ্ঞান গবেষণাকেন্দ্র বা রিচার্স সেন্টার ফর ম্যাথমেটিক্যাল অ্যান্ড ফিজিক্যাল সায়েন্স (আরসিএমপিএস)।
রচনাবলীঃ
---------------
দ্য আল্টিমেট ফেইট অব দি ইউনিভার্স (১৯৮৩) কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে প্রকাশিত হয়। প্রকাশের পর বিজ্ঞানী মহলে বিশেষ সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়। জাপানি, ফরাসি, পর্তুগিজ ও যুগোশ্লাভ ভাষায় অনুদিত হয়। ক্লাসিক্যাল জেনারেল রিলেটিভিটি (১৯৮৪) ডব্লিউ বি বনোর এর সাথে যৌথভাবে সম্পাদনা করেন।
২.রোটেটিং ফিলডস ইন জেনারেল রিলেটিভিটি (কেমব্রিজ)৩.অ্যান ইন্ট্রোডাকশন টু ম্যাথমেটিক্যাল কসমোলজি ৪. কৃষ্ণ বিবর (বাংলা একাডেমি)৫.স্কাই এন্ড টেলিস্কোপ ৬.মাতৃভাষা ও বিজ্ঞান চর্চা এবং অন্যান্য প্রবন্ধ ৭.শিল্প সাহিত্য ও সমাজ ৮.স্প্যানিশ ভাষায় অনুদিত দ্য ফার ফিউচার অব দি ইউনিভার্স
বিখ্যাত সহকর্মী ও বন্ধুমহলঃ
------------------------------------------
অধ্যাপনায় থাকাকালে তাঁর বন্ধু ও সুহৃদমহল গড়ে ওঠে বিশ্বের সেরা বিজ্ঞানীদের নিয়ে। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন তাঁর শিক্ষক ফ্রিম্যান ডাইসন, পদার্থবিজ্ঞানী রিচার্ড ফাইনম্যান, ভারতের সুব্রামানিয়াম চন্দ্রশেখর, পাকিস্তানের নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী আবদুস সালাম, ভারতীয় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন ও অমিয় বাগচী, তাঁর সহপাঠী জয়ন্ত নারলিকার, ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ জিম মার্লিস প্রমুখ। হকিংয়ের কথা তো আগেই এসেছে।
১৯৮৫ সালে যখন নোবেল পুরস্কার প্রাপ্ত আব্দুস সালাম চবিতে এসেছিলেন এবং এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ‘এশিয়ার মধ্যে আমার পরে যদি দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তি নোবেল পুরস্কার পায়, তবে সে হবে প্রফেসর জামাল নজরুল ইসলাম’। এ কথা তিনি পরপর তিনবার বলেছিলেন।
★গণিতে নোবেল না থাকায় তিনি নোবেল পাননি
এই বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী ২০১৩ সালের ১৬ মার্চ মৃত্যুবরণ করেন।
আফসোসের বিষয় জীবিত অবস্থায় এবং মৃত্যুর এতবছর পরেও স্যারকে মূল্যায়ন করিনি আমরা।তার লেখা বই অক্সফোর্ড, কেমব্রিজসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রসিদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হলেও অত্যন্ত দূ:খের বিষয়, আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে তার বই তেমন একটা পঠিত হয়না।কোন রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তি করেননি বলে সুশীল সমাজও স্যারকে নিয়ে তেমন কোন সাড়াশব্দ করেনা।
নিলয় সেন গুপ্ত