Home »
বিসিএস প্রস্তুতি পরামর্শ
» বিসিএসের প্রস্তুতি কীভাবে নিবেন ?
বিসিএসের প্রস্তুতি কীভাবে নিবেন ?
By Admin ডিসেম্বর ০৪, ২০২০
Post Courtesy: Mahdi Hasan Shihab
বিসিএসের প্রস্তুতি কীভাবে নিবেন ?
==============
অনেকেই জিগেস করেন চাকরির জন্য কিভাবে লেখাপড়া শুরু করবো। কথাটির উত্তর খুব সংক্ষেপে দেওয়া সম্ভব নয়। একটু ডিটেইল বলতে হবে।
.
আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা যখন অনার্স/মাস্টার্স শেষ করে তাদের চাকরি সম্পর্কে জ্ঞান থাকে শূন্যের কাছাকাছি। আরো পরিতাপের বিষয় হচ্ছে অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী সিদ্ধান্তই নিতে পারে না তারা কী টাইপের চাকরি বেছে নিবে বা কোন টাইপের চাকরির জন্য সে যোগ্য।
.
দেশে অনেকধরনের চাকরি আছে। সব চাকরির জন্যই আলাদা কিছু প্রস্তুতি নিতে হয়। আমি এখানে শুধু বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি সম্পর্কে বেসিক আলোচনা করবো।
==============
বিসিএস পরীক্ষার তিনটি ধাপ
ক. প্রিলিমিনারী
খ. রিটেন
গ. ভাইবা
তো এখানে দেখা যাচ্ছে প্রিলিমিনারীর জন্য আপনাকে প্রথম প্রস্তুতি নিতে হবে। এবং এ ফেজটাই প্রতিযোগী থাকে সবচেয়ে বেশি।
==============
প্রিলিমিনারী প্রস্তুতির জন্য প্রথমেই যে কাজটি করতে হবে তা হলো প্রিলিমিনারী পরীক্ষার বিগত সালের প্রশ্নগুলো আপনাকে দেখতে হবে। এনালিসিস করতে হবে। এ প্রশ্নগুলো দেখার উদ্দেশ্য প্রশ্ন সল্ভ বা মুখস্ত করা নয়। এ প্রশ্নগুলো আপনি দেখবেন শুধুমাত্র এটা বুঝার জন্য যে বিসিএস প্রিলিতে কী টাইপের প্রশ্ন আসে।
.
প্রশ্ন দেখা বলতে বই কিনে উল্টায় উল্টায় দুএক পৃষ্ঠা দেখা নয়। ১০ম বিসিএস থেকে ৪০তম বিসিএস পর্যন্ত প্রত্যেকটি প্রশ্ন খুটিয়ে খুটিয়ে দেখা ও পড়া।
প্রতিটা প্রশ্ন পড়ার পর ভাববেন কী পড়লেন।
এই সম্পর্কে আপনি আগে কিছু জানতেন কিনা।
জানলে কতটুকু জানেন।
কোথায় পড়েছেন এ সম্পর্কে।
.
আর আপনার যদি প্রশ্নটি সম্পর্কে কিছুই না জানা থাকে তাহলে এখন আপনার জানা হলো যে এই টাইপের প্রশ্নের জন্য ও আপনাকে প্রস্তুতি নিতে হবে।
.
আমি আবার বলছি সবগুলো প্রিলির প্রশ্ন আপনি দেখবেন মুখস্ত করার জন্য নয় বরং শুধুমাত্র আপনার সেল্ফ রিয়ালাইজেশনের জন্য। এটা বুঝার জন্য যে বিসিএস প্রিলিমিনারী পরীক্ষায় আপনাকে কী টাইপের প্রশ্ন ফেইস করতে হবে।
==============
কিভাবে প্রস্তুতি নিবেন তা জানার আগে প্রিলিমিনারী পরীক্ষার সিলেবাসটা দেখে নিন-
Bengali Language and Literature - 35
English Language and Literature - 35
Bangladesh Affairs - 30
International Affairs - 20
Geography, Environment and Disaster Management - 10
General Science - 15
Computer and Information technology - 15
Mathematical Reasoning - 15
Mental Ability - 15
Ethics, Values and Good governance - 10
------------------------------------------------------------------
Total = 200
ডিটেইল সিলেবাস লিংকঃ https://bit.ly/316fczH
==============
প্রস্তুতি শুরু করবেন যেভাবেঃ
.
প্রথমে আপনাকে বেসিক পড়াশুনা করতে হবে। বেসিক পড়াশুনার জন্য ক্লাস সিক্স থেকে ক্লাস নাইন পর্যন্ত যে বইগুলো আছে এগুলো পড়ার বিকল্প নেই। সব না পড়তে পারলেও এট লিস্ট নবম/দশম শ্রেণীর বইগুলো পড়তেই হবে।
.
নবম/দশম শ্রেণীর যে বইগুলো পড়বেনঃ
.
# বাংলা সাহিত্য
# বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
# গণিত
# তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি
# বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা
# ভূগোল ও পরিবেশ
# অর্থনীতি
# বিজ্ঞান
# বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়
.
এছাড়া মোজাম্মেল হকের লেখা ইন্টারমিডিয়েটের "পৌরনীতি ও সুশাসন দ্বিতীয় পত্র" বইটি অবশ্যই পড়তে হবে।
==============
কিভাবে পড়বেনঃ
.
প্রথমেই এতগুলো বই দেখে ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই।
এ ধরনের কম্পিটিটিভ এক্সামে যেহেতু সিলেবাস অনেক বড় থাকে এবং সিলেবাসের তুলনায় সময় কম থাকে তাই এসব এক্সামের প্রস্তুতির জন্য যখন পড়বেন তখন বেসিক কয়েকটি বিষয় মাথায় রেখে পড়বেন।
.
# দ্রুত পড়বেন - আগে থেকে টার্গেট সেট করবেন দিনে কত পেজ পড়তে চান। সেটা মিনিমাম ১০০ পেজ হওয়া উচিৎ। এটা ভেরি করে। যেমন ধরেন বিজ্ঞান বইটি ৩০০ পেজ। তো এই বই প্রথমবার পড়ার জন্য আপনি তিন/চারদিনের বেশি সময় নিবেন না। খুব দ্রুত পড়ে শেষ করে দিবেন। নিজেকে যদি খুব দূর্বল মনে হয় তাহলে প্রথমবার পড়ার সময় বই দাগানোরই দরকার নেই। গল্পের বইয়ের মত পড়ে যান।
.
# বার বার পড়া - আপনাকে একটা বই একাধিকবার পড়তে হবে। রিপিটেশনের কোন বিকল্প নেই। প্রথমবার যদি আপনি বই না দাগান দ্বিতীয়বার পড়ার সময় দাগাবেন।
.
কিভাবে দাগাবেনঃ আপনি যেহেতু আগেই প্রিলির প্রশ্নগুলো পড়েছেন সুতরাং আপনার ধারণা হয়েছে কী টাইপের প্রশ্ন পরীক্ষায় আসে এবং কোন তথ্যগুলো আপনার জানা দরকার। এটা মাথায় রেখে বই পড়ার সময় যে তথ্যগুলো আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হবে সেগুলো দেগে রাখুন বা কোনভাবে মার্ক করে রাখুন। দুই তিন বার বইগুলো পড়ার পর যখন পরবর্তীতে রিভিশান দিবেন তখন শুধুমাত্র দাগানো অংশগুলো পড়ুন।
.
একটা সময় এমন হবে যে আপনি তিন ঘন্টা বা তারও কম সময়ে একেকটা বই রিভিশন দিয়ে ফেলবেন।
.
# মনে রাখা বা মুখস্ত করার চাপ নিবেন না - অনেকেই বলেন এতকিছু পড়ে মনে রাখবো কীভাবে। এইটা মনে করে অনেকে পড়েনই না আবার অনেকে একটা বই পড়তে মাস শেষ করে ফেলেন। তখন দেখা যায় এক মাস ব্যাপী যে বইটি মুখস্ত করার চেষ্টা করলেন সে বইয়ের প্রথমে যেয়ে দেখেন আর কিছু মনে নেই।
.
সমাধান হলো আপনি যখন পড়বেন তখন আল্লাহর উপর ভরসা করে পূর্ণ মনোযোগের সাথে পড়বেন। তথ্যগুলো পরবর্তীতে আপনার মনে থাকবে কিনা বা আপনার সবকিছু মুখস্ত হচ্ছে কিনা এত কিছু ভাববেন না। আপনার কাজ হচ্ছে পড়া। মনে রাখার দায়িত্ব আপনার না। যখন আপনি একটা জিনিস বার বার পড়বেন তখন আপনার ব্রেন আপনার অবচেতনে তার প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো মনে রাখবে। সময়মত সে আপনাকে ডেলিভারি দিবে।
.
আপনার কাজ হচ্ছে দ্রুত পড়া এবং বার বার পড়া। পড়ার সময় মনোযোগ দিয়ে পড়বেন। ডানে বামে তাকাবেন না। বই থেকে চোখ উঠাবেন না। নখ খুটবেন না। চুলকাচুলকি করবেন না। ফোন ড্রয়ারের মধ্যে লক করে রাখবেন। টেবিল থেকে বার বার উঠবেন না। টেবিলে বসার আগে টার্গেট করবেন "এত" পেজ না পড়ে টেবিল থেকে কোনভাবেই উঠবেন না। হাতের কাছে পানি রাখবেন। পরিমানমতো পানি খাবেন। যেভাবে বললাম এভাবে পড়লে আপনার কিছুক্ষণ পরপরই পানি খাওয়ার প্রয়োজন হবে।
.
অনেক সময় দেখা যাবে আপনি বইয়ের দিকে তাকায়ে পড়তেছেন কিন্তু গত পাঁচ মিনিট কী পড়েছেন জানেন না। এই সময়টায় আপনি অন্য জগতে ছিলেন। ডিস্ট্রাক্ট হয়ে গেছিলেন। নো প্রবলেম। আবার মনকে জাগায় নিয়ে আসেন। আবার পড়েন। বার বার বই থেকে হারায় যাবেন, অমনোযোগী হবেন আবার মনকে টেনে ধরে জাগায় নিয়ে আসবেন। বই থেকে চোখ উঠাবেন না। এভাবে মনকে টানাটানি করতে করতে অভ্যাস হয়ে যাবে। তখন দেখবেন মনোযোগ আগের চেয়ে বেশী ধরে রাখতে পারছেন। আস্তে আস্তে মনোযোগ দিয়ে পড়াটা নেশার মত হয়ে যাবে। যা পড়বেন তাই ভালো লাগবে। পড়াটা হয়ে যাবে নেশা। এই নেশা তৈরী হলে বুঝবেন আপনার সফলতা দোরগোড়ায় ইনশাল্লাহ।
==============
উপরে যে বইগুলো পড়ার কথা বলেছি সেগুলো পড়ার পর কন্সট্রাকটিভ প্রস্তুতির জন্য আপনার বাজারি কিছু বই পড়তে হবে। যেটাকে আমরা বিসিএস প্রিলিমিনারি গাইড বলি। গাইডে টপিকগুলো সুন্দরভাবে সাজানো থাকে। আপনি বই দেখে কিনবেন। যেটা দেখে আপনার ভালো মনে হবে সেটা নিবেন।
.
গাইড পড়ার নিয়মঃ
.
প্রিলি গাইডে প্রত্যেকটা চ্যাপ্টার সিলেবাস অনুযায়ী আলাদা করে দেওয়া থাকে। এটা সুবিধাজনক। প্রত্যেকটা চ্যাপ্টারের বেসিক দুটি অংশ থাকে।
.
এক. চ্যাপ্টার সম্পর্কিত আলোচনা
দুই. ঐ চ্যাপ্টার থেকে বিগত বছরগুলোতে বিভিন্ন সরকারী চাকরীর পরীক্ষায় যে প্রশ্নগুলো আসছে সেগুলোর সমাধান।
.
কোন চ্যাপ্টার যখন পড়া শুরু করবেন তখন প্রথমেই ঐ চ্যাপ্টার থেকে আসা বিগত সালের প্রশ্নগুলো একবার পড়ে নিবেন। এটা পড়লে বুঝতে পারবেন এই চ্যাপ্টার থেকে এর আগে কী টাইপের প্রশ্ন এসেছে। এরপর চ্যাপ্টারের মূল অংশের আলোচনা পড়বেন। এসব বইতে প্রয়োজনের চেয়ে অপ্রয়োজনীয় জিনিস বেশি থাকে। বিগত সালের প্রশ্নগুলো এখানে কম্পাইল করা থাকে এটা গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু আপনি নবম/দশম শ্রেণীর মূল বই পড়েছেন, বিসিএস সহ অন্যান্য পরীক্ষার বিভিন্ন সালে আসা প্রশ্নগুলো পড়েছেন এমতাবস্থায় এটা আপনার কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবে গাইডের কোন জিনিসগুলো আপনি পড়বেন। এমনিতে গাইড বইতে কাজের আলোচনা খুব বেশি থাকে না।
.
গাইডের মূল আলোচনা পড়ার পর আবার সালের প্রশ্নগুলো একবার পড়বেন।
এভাবে পড়ার সময় যে প্রশ্নগুলো আপনার মনে হয় আপনার মনে থাকবে না, আবার পড়তে হবে সেগুলো মার্ক করে রাখবেন। পরবর্তী রিভিশানের সময় শুধু মার্ক করা প্রশ্নগুলো পড়বেন। এ অবস্থায় দেখা যাবে আপনি অলমোস্ট ৭০% প্রশ্ন পারবেন এবং মনে থাকবে। ৩০% এ দাগ দিয়ে রাখবেন যা পরবর্তী রিভিশানে পড়বেন।
==============
বিষয়ভিত্তিক কিছু পরামর্শঃ
.
উপরে সিলেবাসের লিংক দেওয়া আছে। সিলেবাসটা সম্পূর্ণ পড়া এবং বুঝা খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেকটা সাবজেক্টের গাইড যখন পড়া শুরু করবেন তখন সিলেবাসটা হাতের কাছে রাখবেন। ভালো করে দেখে নিবেন ঐ সাবজেক্ট সম্পর্কে সিলেবাসে কী আছে।
.
বাংলাঃ
যে কোন গাইড বই পড়ার পাশাপাশি সৌমিত্র শেখর স্যারের জিজ্ঞাসা বইটা পড়তে পারেন। ঐ বইতে সাহিত্য অংশ ডিটেইল পাবেন ফলে মনে রাখতে সুবিধা হবে।
.
আমার ভাগ্নে আমাকে জিগেস করেছে -
’’মামা, কবি সাহিত্যেকদের উপন্যাস কাব্যগ্রন্থ তো বারবার পড়ছি আর ভুলে যাচ্ছি, একটু বুদ্ধি দেনতো"
তো এই প্রশ্ন অনেকেরই আছে। সবার সুবিধার্তে এখানেই উত্তরটি দিয়ে দিলাম।
(উত্তরটি "তুমি" সর্বনামে লেখা। সিনিয়র যদি কেউ পড়ে থাকেন তার কাছে মাফ চেয়ে নিচ্ছি)।
//
বার বার ভুলতে হয় আবার পড়তে হয় এটাই নিয়ম। এটাই কোন জিনিস আয়ত্ব করার সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি।
পড়ার পাশাপাশি লিখতে হয়।
.
বইতে খুব সুন্দর করে সাজানো থাকে না। র্যান্ডমলি থাকে। দেখা যায় একই কবির কাব্যগ্রন্থগুলো তুমি বইতে এট এ গ্লান্স সাজানো অবস্থায় পাবা না। সেক্ষেত্রে খাতায় তোমার নিজের মত করে সাজায় লিখবা। পরবর্তীতে খাতা পড়বা।
আর শুধুমাত্র গাইড পড়লে হবে না।
.
সাপোজ তুমি জীবনানন্দ দাশ পড়তেছ।
তার বইগুলোর নাম পড়েছো। এখন কিছু মনে করতে পারছো না।
সাইকোলজি বলে শুধু জীবনানন্দ দাশের বইয়ের নাম তোমার মনে থাকবেনা।
.
তার বইয়ের নাম মনে রাখার জন্য তার সম্পর্কে ব্যাকগ্রাউন্ডে কিছু স্মৃতি দরকার।
এর জন্য তুমি জীবনানন্দের উইকিপিডিয়া পেজ পড়বে।
বাংলাপিডিয়া পেজ পড়বে।
জীবনানন্দ লিখে গুগলে সার্চ করলে যা আসে তাই পড়বে।
.
এরকম পড়লে ব্যাকগ্রাউন্ডে স্মৃতি তৈরী হবে। তখন তুমি রিলেট করে মনে রাখতে পারবা।
.
যেমন
জীবনানন্দ আর নজরুল ইসলাম একই সালে জন্মেছিলেন
জীবনানন্দ ট্রাম দূর্ঘটনায় মারা গেছিলেন
তার মা ও কবি ছিলেন - কুসুমকুমারী দাস (আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে - তার মায়ের কবিতা)
তার কবিতাকে রবীন্দ্রনাথ রূপ বৈচিত্রময় বলছেন
.
এগুলো আমার স্মৃতি থেকে বললাম। এরকম স্মৃতি মনে পড়লে তার সম্পর্কে বা তার বই সম্পর্কে মনে পড়ে।
এজন্য ব্যাকগ্রাউন্ড জানা দরকার। তুমি হুট করে একজনের লেখা বইগুলোর নাম মনে করতে পারবে না।
//
এখানে মুল কথা হচ্ছে কোন জিনিস মনে রাখতে হলে আপনাকে সে জিনিসটার সাথে কিছু না কিছু রিলেট করে মনে রাখতে হবে। যেমন "বনলতা সেন" বা "রূপসী বাংলার কবি" এগুলো বললেই জীবনানন্দের কথা মনে পড়ে। প্রত্যেকটা কবি সাহিত্যিকের ছবি দেখবেন। এটাও রিলেট করতে সহায়তা করে।
.
অধিকাংশ বিসিএস পরীক্ষার্থীদের একটা দোষ হচ্ছে আমরা শুধুমাত্র গাইড পড়ে শিক্ষিত হতে চাই। মৌলিক কোন বই পড়ি না। এটা খুবই দুঃখজনক।
.
আপনি দশটা লেখকের নাম বলতে পারবেন। তারা কে কী লিখছে বলতে পারবেন। কিন্তু যদি জিগেস করা হয় তাদের লেখা কোন বই পড়েছেন? তখন উত্তর আসে "না"।
.
অথচ আপনি ক্যাডার হতে যাচ্ছেন কিন্তু আপনি হুমায়ুন আহমদ আর জাফর ইকবাল বাদে আর কারো বই জীবনে পড়েন নি। আপনার ব্রেন তো চিন্তা করতেই শিখেনি। সুতরাং সে রিলেট করতে শিখেনি। আপনি কীভাবে সবকিছু মনে রাখবেন! যে যত বেশি পড়ে - সে যাই পড়ুক - সে যেকোন নতুন তথ্য দ্রুত সিমুলেট করতে পারে, রিলেট করতে পারে এবং মনে রাখতে পারে।
.
যারা জীবনে কোন কিছু না পড়ে শুধুমাত্র গাইড পড়ে মনে রাখতে চান, বিসিএস দিতে চান তারা ১৪০/১৫০ টা দাগানোর পরও পাশ করতে পারেন না।
.
যাই হোক এটা আমাদের আলোচনার উদ্দেশ্য না। এ আলোচনা অন্য সময় করবো। বই পড়ার সময় শেষ হয়ে যায়নি। সফলতা পেতে পড়তে হবে। এটাই শেষ কথা।
===============
ইংরেজীঃ
.
প্রফেসরসের গাইড বা প্রফেসরসের কম্পিটিটিভ এক্সাম বইতে যত সালের প্রশ্ন আছে সব পড়ে ফেলেন। গ্রামার অংশের জন্য এটা এনাফ।
.
সাহিত্যের জন্য যে কোন বই পড়তে পারেন। ২০/২৫ টা কবি সাহিত্যিক থেকে বার বার প্রশ্ন আসে। এদের সম্পর্কে উইকিপিডিয়া থেকে পড়ে নেন। সালের প্রশ্ন দেখে যে আইডিয়া হয়েছে সে অনুযায়ী নোট নেন। বার বার পড়েন।
.
অনলাইনে সাহিত্য বিষয়ক প্রচুর এমসিকিউ পাবেন সেগুলো সল্ভ করেন।
===============
বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলীঃ
.
সাধারন জ্ঞানের জন্য প্রত্যেকের জীবনে একবার হলেও "আজকের বিশ্ব" বইটা পড়া উচিৎ বলে আমি মনে করি।
.
নবম দশম শ্রেণীর বইগুলো এক্ষেত্রে কাজে লাগবে।
যে কোন একটা গাইড বই পড়বেন।
প্রত্যেক মাসের কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স পড়বেন।
.
এখানে দুটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ
এক. কারেন্ট অ্যাফেয়ার্সে "জব সলুশান" নামে একটা অংশ থাকে সেখানে প্রত্যেক মাসে যে পরীক্ষাগুলো হয় সে পরীক্ষাগুলোর সলুশান দেওয়া থাকে। প্রত্যেক মাসে এটা পড়তে হবে। এটা পুরা হটকেক।
.
দুই. পত্রিকা পড়তে হবে। পত্রিকার সব নিউজ পড়ার দরকার নেই। বিশেষত যেগুলো পড়বেনঃ
# সম্পাদকীয় ও উপসম্পাদকীয় পেজ
# আন্তর্জাতিক পেজ
# সম্ভব হলে অর্থনীতি পেজ
# যে ইস্যুগুলো এখন আলোচিত সেগুলো সেটা জাতীয় হোক বা আন্তর্জাতিক
# বিবিসি বাংলায় প্রতিদিন আট/দশটা নিউজ আপলোড দেয়। এগুলা পড়বেন। অবশ্য এখানকার সব নিউজ গুরুত্বপূর্ণ না।
# যে কোন ইস্যু সম্পর্কে ক্লিয়ার ধারণা থাকতে হবে। এগুলো রিটেন ও ভাইবাতে কাজে লাগবে। ইস্যুগুলো ক্লিয়ারলি জানলে প্রিলিতেও ইনডিরেকটলি কাজে লাগবে। যেমনঃ ব্রেক্সিট, আমেরিকা চীন বাণিজ্য যুদ্ধ, রোহিঙ্গা, চলমান জলবায়ু ইস্যু, আইএস, মধ্যপ্রাচ্য ইস্যু।
.
যে কোন অনলাইন পত্রিকার হেডে পত্রিকার সার্চবারে কোন কীওয়ার্ড লিখে সার্চ করলে ঐ রিলেটেড সব নিউজ একবারে পাওয়া যায়। এখান থেকে কয়েকটা নিউজ পড়লে ঐ ইস্যু সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারনা পাওয়া যায়। এটা হচ্ছে কোন ইস্যু সম্পর্কে জানার শর্টকাট পদ্ধতি।
.
# ইংরেজী পত্রিকা পড়ার অভ্যাস গড়েন। প্রত্যেকদিন মিনিমাম দুইটা আর্টিকেল পড়েন। এইটা কীভাবে করা যায় এইটা নিয়ে আরেকটা পোস্ট দিবো যখন সময় পাই।
==================
তাছাড়া বিসিএস ক্যাডার হতে হলে অবশ্যই কিছু মৌলিক বই পড়তে হবে। শুধু গাইড পড়ে টেনেটুনে প্রিলি পাশ করা গেলেও রিটেন/ভাইবায় আটকে যাবেন।
.
কিছু মৌলিক বই
১. অসমাপ্ত আত্নজীবনী
২. কারাগারের রোজনামচা
৩. শেখ মুজিব আমার পিতা
৪. আমি বিজয় দেখেছি
৫. মূলধারা ৭১
৬. বাংলাদেশর পররাষ্ট্রনীতি
৭. বাংলাদেশের সংবিধান (প্রিলি/রিটেন/ভাইবা সব জায়গায় বিরাট গুরুত্বপূর্ণ)
৮. আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর
৯. ছোটদের রাজনীতি ও অর্থনীতি
১০. নাগরিকদের জানা ভালো
১১. পরার্থপরতার অর্থনীতি
১২. জোসনা ও জননীর গল্প
.
এছাড়া আপনার চিন্তাশক্তি বাড়ানোর জন্য, নিজেকে আরো প্রোডাক্টিভ করার জন্য কিছু সাহিত্যও পড়তে হবে।
যাদের সাহিত্য পড়তে পারেনঃ
.
রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর
নজরুল ইসলাম
আহমদ ছফা
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
সমরেশ মজুমদার
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায়
বিভুতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়
==================
Geography, Environment and Disaster Management
নবম/দশম শ্রেণীর বই পড়লে অনেক কিছু কাভার করবে। আর বাকীটা গাইড থেকে পড়লেই হবে যে নিয়মে বলেছি সেই নিয়মে।
==================
বিজ্ঞানঃ
.
বেসিকের জন্য তো নবম/দশম শ্রণীর বই। আর গাইড থেকে শুধুমাত্র সালের প্রশ্ন পড়লেই হবে। যেভাবে বলেছি সেভাবে।
কিছু টপিকের জন্য গুগলের সহায়তা নিবেন, ইউটিউবের সহায়তা নিবেন। কোন টপিক না বুঝতে পারলে ইউটিউবে দেখবেন আপনার কথা চিন্তা করে আপনি যা খুঁজছেন তা সেখানে কেউ আপলোড দিয়ে রেখেছে।
.
পড়ার মাঝখানে গুগল / ইউটিউব সার্চ করবেন না। তাহলে পড়া হবে না। যেগুলো বুঝতেছেন না বা সার্চ করা দরকার সেগুলোর চেক লিস্ট করবেন। তারপর একবারে বসে গুগল / ইউটিউব সার্চ করে নোট নিবেন।
==================
Computer and Information technology:
এসএসসি বা ইন্টারমিডিয়েটের বই পড়বেন আর নিয়মানুযায়ী যে কোন একটা গাইড বই পড়বেন। প্রয়োজনে গুগলের সহায়তা নিবেন।
==================
Ethics, Values and Good governance
এইটা নিয়ে খুব বেশী চিন্তা করবেন না। এখানে দশটা প্রশ্ন থাকে দশটাই কনফিউজিং। এটা নিয়ে একমাস প্রস্তুতি নিলেও ভুল হওয়ার সম্ভাবনা আছে। গাইডে বিভিন্ন আগডুম বাগডুম লেখা আছে যা কোন কাজে লাগে না। পরীক্ষায়ও আসে না। সম্ভব হলে বিগত সালের প্রশ্ন দেখে যে কোন বই বা গাইড থেকে কিছু বেসিক জিনিস পড়ে চিন্তা করে মাথার মধ্যে একটা ফরমেট রেডি করে রাখবেন। পরীক্ষায় প্রশ্ন দেখে শিওর হয়ে যদি দুই একটা দাগাতে পারেন দাগাবেন নাইলে দাগাবেন না। এগুলো প্রায় না দেগেই আমি পরপর চারটি প্রিলি টিকেছি। দুই একটা যদি দেগে থাকি তাহলে হান্ড্রেড পার্সেন্ট শিওর হয়ে দেগেছি।
==================
Mathematical Reasoning
Mental Ability
.
এ দুটিই হচ্ছে প্রিলি ও রিটেনে আপনার সফলতার আসল ও শেষ কথা। এই দুইটাতে যে ভাল করবে সে তরতর করে সব পার হয়ে যাবে।
.
ছয় বছর অংক না করে যখন চাকরীর পড়া পড়তে যেয়ে অংক দেখবেন তখন মাথা ঘুরা শুরু হবে। কিন্তু ভয়ের কিছু নেই। ভয় পাবেন না। এই ভয় জয় করতে পারলেই আগায় যাবেন। ধৈর্য ধরে মাঠে থাকতে হবে।
.
অংকের জন্য প্রথমে দেখেন সিলেবাসে কোন কোন টপিক আছে। প্রত্যেকটা টপিকের এক্কেবারে বেসিক বুঝতে হবে। ডিটেইল বেসিক না বুঝে গাইড পড়ে অংকের শর্টকাট শিখে অংক করলে ধরা খাবেন।
.
মনে করেন, ক্লাস থ্রি ফোরে ভগ্নাংশ আছে। আপনি ভগ্নাংশ ক্লিয়ার বোঝেন না। শতকরা ক্লিয়ার বোঝেন না বা ধারা বোঝেন না। ক্লাস থ্রি এর বই থেকে প্রয়োজনে ভগ্নাংশ শিখতে হবে।
.
থ্রি থেকে টেন পর্যন্ত যে বইতে যা আছে সিলেবাস দেখে প্রত্যেকটার বেসিক আয়ত্ত্ব করেন। আর প্রচুর অংক করেন। এখানে অনেকেই হাল ছেড়ে দেয়। হাল ছেড়ে দিছেন তো সব শেষ। হাল ছাড়া যাবে না। আপনাকে বুঝতেই হবে সব টপিক। অংক বুঝার আগে যত কঠিন, বুঝার পরে তত সহজ। দাঁত কামড়ে লেগে থাকেন আর প্রাকটিস করেন। না পারলে আশেপাশের কারো সাহায্য নেন। প্রত্যেকদিন মোটামুটি এক/দুই ঘন্টা অবশ্যই অংক করবেন। লেগে থাকলে আস্তে আস্তে পারা শুরু করবেন ইনশাল্লাহ।
==================
উপরে যা বললাম এগুলো যখন আপনার পড়া শেষ হবে এবং দুই তিনবার রিভিশান ও দিয়ে ফেলবেন তখন বিসিএসের একটা বড় জব সলুশান কিনবেন বইটি অনেক বড়। প্রায় ১৫০০ পেজ। এটা দেখে চোখ উল্টাবেন না।
.
আপনি তখন প্রস্তুতির যে অবস্থায় থাকবেন তাতে প্রত্যেকদিন মিনিমাম ১০০ পেজ সলভ করতে পারবেন। মোটে ১৫ দিনের মামলা। হিসাবে ১৫ দিন ও লাগার কথা না।
.
জব সলুশান কীভাবে পড়বেনঃ
.
এটা যখন পড়বেন তখন অংক করবেন না। অংক পরবর্তীতে করার জন্য রেখে দিয়ে অন্যান্য যা আছে সব সলভ করবেন। দ্রুত করবেন। তখন দেখবেন যে আপনি প্রায় সবই পারেন।
.
সপ্তাহে ৫ দিন সল্ভ করবেন। বাকী দুইদিন হবে আপনার অংক দিবস। এই দুইদিন শুধু একটানা অংক করবেন। এভাবে পড়লে আপনার খুব দ্রুত শেষ হবে। এভাবে পড়লে শেষ করতে দুই থেকে আড়াই সপ্তাহের বেশী কোনভাবেই লাগবে না।
.
আগে যেভাবে বলেছি পড়ার সময় যে প্রশ্নগুলো আপনার দ্বিতীয়াবার পড়া উচিৎ বলে আপনি মনে করেন সেগুলো দেগে রাখবেন। সেকেন্ড টাইম রিভিশানের সময় শুধু দাগানো প্রশ্ন পড়বেন। দ্বিতীয়বার রিভিশান দিতে সময় লাগবে আট থেকে দশদিন।
.
উপরে যা বলেছি সেভাবে পড়ে দুই বার জব সলুশান খতম দিলে আপনি আগুন হয়ে যাবেন। তখন সব প্রিলিই পাস করবেন ইনশাল্লাহ।
.
আমি জানি, প্রচণ্ড ডেডিকেশান না থাকলে এভাবে পড়া সম্ভব না। তবে এভাবে পড়লে আপনি কিছু একটা করে ফেলবেন ফর শিওর। যারা পাশ করে বার বার তারা মোর অর লেস এমন ডেডিকেশান দিয়েই পড়ে বলে আমি জানি।
.
বিসিএস মিন মিন করার কাজ না। এটা গতি, ডেডিকেশান আর ধৈর্যের পরীক্ষা। আপনি কতটুকু মেধাবী বিসিএস হওয়া না হওয়া তার উপর নির্ভর করে না। বিসিএস নির্ভর করে প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তি, ধৈর্য, হার না মানা মানসিকতা, কন্টিনিউটি আর কনসিস্টেন্সির উপর।
==================
অনেক কথা বললাম। আরো অনেক কথাই মাথায় আছে। সব একসাথে লেখা যাবে না। যেভাবে বলেছি এভাবে পড়া শুরু করেন।
পড়া শুরু করলে অনেক প্রশ্ন রেইজ করবে।
.
কোন প্রশ্ন থাকলে আমাকে ইনবক্স করবেন। আপনাদের প্রশ্ন কম্পাইল করে আমি আবার পোস্ট দিবো। ওভার ফোনে গত চার বছর থেকে এই ব্যাপারে কথা বলে আসছি। একই কথা পঞ্চাশ জনকে বলা বিরক্তিকর ও সময়ের অপচয়।
.
আপনারা যে প্রশ্ন করেন প্রশ্নের ধরণ মোর অর লেস একইরকম। এখন থেকে আপনাদের উত্তর ফেইসবুকে পোস্ট আকারে দিবো। চাকরীর প্রস্তুতি সম্পর্কিত কথা বলতে ফোন না দেওয়ার জন্য বিনীত অনুরোধ করছি। যা বলার ইনবক্সে বলবেন। সময়মত এনসার দিয়ে দিবো।
.
যেহেতু এখন এইচআর এ চাকরী করি এবং এইচ আর কনসাল্টেন্সি ফার্মে ছিলাম সেহেতু বাংলাদেশের কর্পোরেট চাকরী সম্পর্কে খুব অল্প হলেও জানার সুযোগ হয়েছে। ভার্সিটি পাশ দেড় শতাধিক ছেলেমেয়ের ভাইবা নিয়েছি। সুতরাং বর্তমান ছেলেমেয়েদের স্কিল ও তাদের সামগ্রিক অবস্থা সম্পর্কে মোটমুটি জানি। এ ব্যাপারেও কিছু কাজ অফিসিয়ালি করেছি। সময় যখন পাবো তখন এগুলোও আপনাদের সাথে শেয়ার করবো।
.
সবাই ভালো থাকবেন।
❒❒ Transformation of Sentences-এর ওপর আপনার পছন্দের পোস্ট/আর্টিকেল পড়তে নিচের লিংকে ক্লিক করুন/প্রবেশ করুন:
.....................................................................