বইয়ের নামঃ বাংলাদেশ রক্তের ঋণ
লেখকের নামঃ অ্যান্থনী মাসকারেণহাস
অনুবাদকঃ মোহাম্মদ শাহজাহান
#রিভিউ by : S N Shuva.
অ্যান্থনী এ বইতে বাংলাদেশ এর মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী ১০ বছরের রাজনৈতিক অবস্থা, ক্ষমতার জন্য সংগঠিত হত্যাকান্ড, অভুত্থান, বিদ্রোহ, ক্ষমতা হস্তান্তর ঘিরে সৃষ্ট অরাজকতা ইত্যাদিকে ১৩ টি ভাগে ভাগ করে বর্ণনা করেছেন।
বর্ণনার সাথে মুদ্রিত ছবি ও দলিলপত্রের তালিকা ও আরো কিছু সংযুক্তি আছে যা পাঠককে এই ঘটনাগুলোর বর্ণনা বিশ্বাস করতে সাহায্য করবে।
এ বইয়ে শেখ মুজিব হত্যার ষড়যন্ত্রে জড়িত মেজর ফারুক ও মেজর রশিদের জীবনবৃত্তান্ত জানা যায়। শেখ মুজিব, বাংলাদেশের জনক, বাংলাদেশ এর মানুষ যার জন্য জীবন বাজী রাখতেও কার্পণ্য করতো না তারাই মুজিব হত্যায় তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় নি। এর কারন,মধু বিষে পরিণত হওয়া। মুজিব কথা দিয়ে কথা রাখতে পারছিলেন না। অপরদিকে ক্ষমতার সাড়ে তিন বছর পরেও শেখ মুজিব দেশের জন্য তেমন কিছু করতে না পারায় দেশপ্রেমিকরা হতাশার চরম পর্যায় পৌঁছায়। মেজর ফারুক আর মেজর রশিদ তেমন ২ জন মানুষ যারা দেশের মঙ্গলের জন্য যেকোন কিছু করতে রাজি, এমন কি জাতির পিতাকে হত্যার জন্যও প্রস্তুত! শেখ মুজিব দীর্ঘ ১০ বছরের জেলে থাকাবস্থায় সেনাবাহিনীর প্রতি সৃষ্ট ঘৃণাও তার মৃত্যুকে ত্বরাণ্বিত করে।তবুও জাতিরপিতার পরিবারকে বর্বরচিত্তে হত্যাকান্ড পুরো জাতির জন্যে এক কলঙ্কজনক অধ্যায়!
শেখ মুজিব হত্যাকান্ডের পর অবৈধ সরকার তৈরী, আওয়ামী লিগ নেতা খন্দকার মোশতাক কে ক্ষমতায় বসানোর মাধ্যমে রাজনীতির আরেক কালো অধ্যায়ের সূচনা হয়। দেশের মানুষ চেয়েছিল ইসলামী প্রজাতন্ত্রী হিসেবে বাংলাদেশ স্বীকৃত লাভ করুক। কিন্তু খন্দকার মোশতাক জনগণকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে নিজেও শেখ মুজিবের মতোই নিরপেক্ষ জাতি হিসেবে বাংলাদেশ কে পরিচয় লাভ করাতে চাইলেন অত্যন্ত চালাকির সাথে!
যা কিছুদিন পর হলেও জনগণ জানতে পারে। মাত্র ৮৩ দিনের শাসনকালে তিনিও চেয়েছিলেন সামরিক বাহিনীকে তলিয়ে দিতে। কিন্তু ভাগ্য তার পক্ষে ছিল না। তাকে জোড় করে ক্ষমতা থেকে সরানো হয়। কিন্তু তিনি তার প্রতিদ্বন্দী বিখ্যাত ৪ নেতাকে আগেই জেলখানার ঢুকিয়ে রেখেছিলেন। জেলখানার কতৃপক্ষের কাছে নির্দেশ ছিল কোনো কারনে মোশতাককে বন্দী করা হলে তাদের কে সাথে সাথে হত্যা করা হবে এবং তাই করা হয়!
এর মাঝে সিপাহী বিদ্রোহ সংগঠিত হয়। খন্দকার মোশতাক কে ক্ষমতা থেকে সরানোর পরে মেজর রশিদ ও মেজর ফারুকের জীবন সকটাপন্ন হয়ে উঠে। তাদের কে সেনাবাহিনী খুনি বলে এড়িয়ে চলতো এবং ক্ষমতা দিতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করতো। এজন্য তারা ভয়ে ছিল হয়তো তাদেরকেও মেরে ফেলা হবে। কিন্তু কোনো এক অজ্ঞাত কারনে এবং বলা যায় ভাগ্যের জোরে তারা বারবার বেঁচে যায়। মুজিব হত্যার সাথে তারা জড়িত এ কথা জানার পরেও তাদের কে বন্দী করা হয় নি। এমনকি জিয়া ক্ষমতা গ্রহণের পরেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেন নি!
এরপর ক্ষমতার সিংহাসনে ঘুরেফিরে অনেকেই লাভ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য কারো শাসনকাল দীর্ঘস্থায়ী হয় নি। ভাগ্য জেনারেল জিয়ার জন্য বারবারই সুপ্রসন্ন ছিল তাই তিনি সাধারন মেজর জিয়া থেকে জেনারেল জিয়া এবং পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট জিয়াতে পরিনত হন। প্রেসিডেন্ট হবার পর তিনি দেশের জন্য অনেক ভালো কাজ করলেও তার ভয়াবহ হত্যাকান্ডের জন্য তাকে দেশবাসী কোনোদিন মাফ করবে না। জেনারেল জিয়ার ব্যাপারে তার এক সহকর্মী বলেনঃ "তিনি এমন একজন মানুষ ছিলেন, যিনি এক হাতে হত্যা এবং অন্য হাতে আহার করতে পারতেন।"এবং তিনি ছিলেন অত্যন্ত উচ্চবিলাসী।ব্যক্তি জিয়া সৎ থাকলেও ক্ষমত্তার লোভে তিনি তার মন্ত্রী ও আমলাদের দুর্নীতি ও লুণ্ঠনে নীরব ছিলেন।মূলত তার আমল থেকেই আমলা মন্ত্রীদের দুর্নীতি এদেশের প্রশাসনেত সাথে প্রকাশ্যে আষ্টেপৃষ্ঠে যায়।
জেনারেল জিয়াকে মারার জন্য ২০ বারের মতো হত্যাকান্ডের পরিকল্পনা করা হয়। জেনারেল মঞ্জুর এ ব্যাপারে সফল হন অনেকটা ভাগ্যের জোরে। প্রেসিডেন্ট জিয়াকে ১৯৮১ সালে ৩০শে মে হত্যা করা হয় চট্টগ্রামে।তার মৃত্যুতে জেনারেল এরশাদের হাত থাকলেও তা এই বইতে সুকৌশলে এড়িয়ে যাওয়া হয়। কারণ বইটি এরশাদের শাসন আমলেই প্রকাশিত!
নিজ দর্শন :যদি দুই মেজরের কথা বলি, তাদের যদি এতই দেশপ্রেম ছিল তবে কেন তারা নিজেই দেশের শাসনভার নিলেন না? একটার পর একটা নেতাকে হত্যা করে তারা দেশটাকে একদম পঙ্গু করে রেখেছেন। বস্তুত তাদের যা ছিল তা দেশপ্রেম নয় বরং অধৈর্য! অথবা এমন হতে পারে যে নেতারা বড্ড বেশিই অসহিষ্ণু হয়ে গিয়েছিলেন। জানিনা। শেখ মুজিব এবং জিয়াউর দুইজনের একই ভুল ছিল তা হলো নিজেদের ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করতে যেয়ে অন্যায়ের আশ্রয় নেয়া। এটুকু না করলে হয়ত আমরা এতদিন আরো উন্নতির স্বাদ পেতাম।
"দুরভিসন্ধি আর হত্যা বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই চলে আসছে। এক হত্যা আর এক হত্যাকে ত্বরান্বিত করেছে- দেশটাকে আবদ্ধ করেছে এক রক্তের ঋণে।
লেখক ছিলেন একজন বিদেশি সাংবাদিক। এইজন্য তিনি অনেক কাছে থেকে সবকিছু দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন এবং মোটামুটি ৮০% নিরপেক্ষভাবেই প্রকাশ করেছেন।যা বইটির গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়েছে। বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকে শুরু করে তার কৈশোর অবধি ইতিহাস জানার জন্যে বইটি অতুলনীয়!
////
Home »
১. বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
» বইয়ের নামঃ বাংলাদেশ রক্তের ঋণ
লেখকের নামঃ অ্যান্থনী মাসকারেণহাস
অনুবাদকঃ মোহাম্মদ শাহজাহান
বইয়ের নামঃ বাংলাদেশ রক্তের ঋণ লেখকের নামঃ অ্যান্থনী মাসকারেণহাস অনুবাদকঃ মোহাম্মদ শাহজাহান
By ─────────────── সেপ্টেম্বর ০৬, ২০১৯
❒❒ Transformation of Sentences-এর ওপর আপনার পছন্দের পোস্ট/আর্টিকেল পড়তে নিচের লিংকে ক্লিক করুন/প্রবেশ করুন:
.....................................................................