BCS পরীক্ষার্থীদের জন্য -

জেরুজালেমকে নিয়ে কেন এত দ্বন্দ্ব ?

জেরুজালেমকে নিয়ে কেন এত দ্বন্দ্ব ?
===========================
.
৬ ডিসেম্বর, ২০১৭ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যেরুযালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তরের নির্দেশ দেয়। ১৯৯৫ সালে ইসরাইল-ফিলিস্তীন স্বাক্ষরিত অসলো শান্তিচুক্তিতে উভয় পক্ষ মেনে নেয় যে, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে জেরুজালেম প্রশ্নটি নির্ধারিত হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় আইজ্যাক রবিন ও ফিলিস্তিন নেতা ইয়াসির আরাফাত যে শান্তি কাঠামো স্বাক্ষর করেন, তাতেও এ প্রশ্নে উভয় পক্ষের সম্মতি ছিল। জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৭ তুরস্কের ইস্তানবুলে অনুষ্ঠিত হয় ইসলামী সম্মেলন সংস্থা (OIC)-এর বিশেষ সম্মেলন। এতে পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী ঘোষণা করা হয় এবং একে স্বীকৃতি দেয়ার প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। মার্কিনীরা দূতাবাস স্থানান্তর করল, অাবার রক্তপাত। কিন্তু কেন?
.
প্রশ্ন হলো জেরুজালেমকে নিয়ে কেন এত দ্বন্দ্ব ?
.
ইসলামী ধর্মীয় ইতিহাস এবং হিব্রু বাইবেল মোতাবেক, নবী হযরত ইব্রাহিম (আ) ঈশ্বর ইয়াহওয়েহ (হিব্রুতে ঈশ্বরকে এ নামেই ডাকা হয়, আর আরবিতে আল্লাহ্‌) তাকে প্রতিশ্রুতি দেন যে পবিত্র ভূমি কেনান তার সন্তানাদিকে দেয়া হবে (যেটা এখন ইজরায়েল ফিলিস্তিন অঞ্চল)। অর্থাৎ তার বংশধররা এ এলাকার মালিক হবে। ইব্রাহিম (আ) এর প্রধান দুই পুত্র ইসমাইল (আ) আর ইসহাক (আ)। ইসমাইল (আ) আর তার মা হাজেরা-কে আরবের মক্কায় নির্বাসনে পাঠানো হয়। আর ওদিকে কেনান দেশে রয়ে যান ইসহাক (আ) [আইজ্যাক]। তার পুত্র ছিলেন ইয়াকুব (আ) [জ্যাকব]। ইয়াকুব (আ) এর আরেক নাম ছিল ইসরাইল। তার বারো সন্তানের নামে ইজরায়েলের বারো গোত্রের নাম হয়।

ঘটনাক্রমে ১২ পুত্রের একজন ইউসুফ (আ) ভাইদের চক্রান্তে মিসরে উপনীত হয় দাস হিসেবে। সময়ের ব্যবধানে মিসরের আমেনহোতেপের আস্থাভাজন ব্যাক্তি হন এবং নবুওয়্যাতপ্রাপ্ত হন। দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে দুর্ভিক্ষপীড়িত অন্য ভাইরা তারই কাছে তখন সাহায্য চাইতে মিসরে আসে। কালের পরিক্রমায় শত শত বছর বাদে এই ইজরায়েলিরা মিসরের ফারাও এর দাসে পরিণত হয়, যখন এক মিসরীয় যুবরাজ (পালিত পুত্র) নিজেকে রাজপরিবারের সমস্ত আয়েশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে বহু বছর বাদে ইজরায়েলের নির্যাতিতদের নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন, তিনি হলেন নবী হযরত মুসা (আ)। লোহিত সাগর পাড় করে তিনি ইজরায়েল জাতিকে নিয়ে যান ওপারে ফেরাউনের কবল থেকে মুক্ত করে এবং কেনান দেশে উপনীত হন। [বাংলাতে এখানে একটি ভুল তথ্য অনেকে জেনে থাকে যে, মুসা (আ) নাকি নীলনদ পার করেছিলেন, কিন্তু কুরআন আর বাইবেল এ ব্যাপারে একমত যে, এটা লোহিত সাগর ছিল।]
.
কেনান দেশের আদি নাগরিক তারাই এখন আমরা যাদের ফিলিস্তিনি বলি। তবে ফিলিস্তিনিরাও এখানে আসে ইজরায়েলিরা আসার কিছু আগে, খ্রিস্টপূর্ব ১২ শতকে। ফিলিস্তিনিরা পৌত্তলিক ছিল এবং দেবতার পূজা করত। ইজরায়েলিরা কেনান দেশে স্থানীয়দের সাথে বিবাহ করে। ফলে পরবর্তী বংশধর এমনভাবে বাড়তে থাকে। তাই জিনগতভাবে তারা আসলে প্রায় একই। কেবল ধর্মবিশ্বাসে ছিল আলাদা। ইজরায়েলিরা যেখানে উপাসনা করত এক ঈশ্বরের, সেখানে ফিলিস্তিনিরা ছিল পৌত্তলিক।

ইজরায়েল রাষ্ট্রের প্রথম রাজা হন তালুত, যাকে বাইবেলে বলে সল (Saul)। বেথেলহেমের হযরত দাউদ (আ) [ডেভিড] তালুতের সেনাবাহিনী থেকে ফিলিস্তিনের জালুত/গোলায়াথ-কে পরাজিত করে একক যুদ্ধে এবং তখনই সকলের নজরে আসে। কালক্রমে তিনি ইজরায়েলের জনপ্রিয় রাজা কিং ডেভিড/দাউদ হন [এবং ইসলাম মতে, আল্লাহর নবী]। তার পুত্র সলোমন বা সুলাইমান (আ) তার রাজ্যকে আরো প্রসারিত করেন। তিনি প্রতিষ্ঠা করেন টেম্পল অফ সলোমন বা বাইতুল মুকাদ্দাস।

সুলাইমান বা সলোমনের মারা যাবার পর পুত্র রেহোবামের রাজত্বকালে ইজরায়েলের পতন শুরু হয়, পৌত্তলিকতায় ডুবে যেতে থাকে। শক্তিমান ব্যাবিলন রাজ্যের আক্রমণে ইজরায়েলিরা বন্দি হয়ে পড়ে। তাদের নির্বাসন শুরু হয়, আর ওদিকে ইজরায়েল রাষ্ট্র ধুলায় মিশে যায়। পারস্যের রাজা সাইরাস তাদের ব্যাবিলন থেকে মুক্ত করেন।

সুলাইমানপুত্র রেহোবামের সময় রাজ্য দু ভাগ হয়। উত্তরের রাষ্ট্র ইজরায়েল, আর দক্ষিণের রাষ্ট্র জুদাহ। এটা মোটামুটি খ্রিস্টপূর্ব ৯ম-১০ম শতকের কথা। আর মাঝখানে এত কাহিনী গিয়ে রাজা সাইরাসের হাতে উদ্ধার পাবার সময়কাল ছিল খ্রিস্টপূর্ব ৫৩৯ সাল। যখন খ্রিস্টপূর্ব ৩২২ সালে অ্যালেক্সান্ডার দ্য গ্রেট মারা গেলে, টলেমি নিয়ে নিলেন পুরো ইহুদী অঞ্চলের দখল। যদিও পরে সিরিয়ার সেলুচিদদের হাতে খ্রিস্টপূর্ব ১৯৮ সালে হারিয়ে ফেলেন এ অঞ্চল। ওদিকে গ্রিক সভ্যতার সংস্পর্শে এসে ইহুদী ধর্ম প্রভাবিত হয়ে নতুন এক সেক্টর গড়ে ওঠে, যারা পরিচিত হয় হেলেনিস্টিক জ্যু (ইহুদী) নামে। তাদের মাঝে ছিল গ্রিক সংস্কৃতির ছোঁয়া। মূল ধারার ইহুদীরা তাদের ধর্মচ্যুত মনে করত।
খ্রিস্টপূর্ব ৬৩ সালে রোমান জেনারেল পম্পেই জেরুজালেম দখল করে। যীশুর জন্মের ৪৭ বছর আগে আলেক্সান্দ্রিয়ার যুদ্ধে ৩০০০ ইহুদী সেনা পাঠানো হয় যারা জুলিয়াস সিজার আর ক্লিওপেট্রাকে রক্ষা করে।
.
রোমান সংসদ হেরোদ নামের একজনকে ইহুদীদের রাজা হিসেবে নিয়োগ দেয়। এরকম সময়ে এই ইহুদী অঞ্চল যখন রোমান সাম্রাজ্যের অধীনে, তখন জন্মগ্রহণ করেন যীশু খ্রিস্ট (ঈসা আঃ)। কিন্তু যখন যীশু ইহুদী ইমামদের (র্যা বাইদের) দুর্নীতি নিয়ে কথা বলতে লাগলেন তখন ইহদিরা চক্রান্ত করল, তারা যীশুকে ক্রুশে দিয়ে মেরে ফেলে। ইসলাম মতে, আল্লাহ্‌ হযরত ঈসা (আ)-কে অক্ষত রাখেন এবং তুলে নেন, যিনি শেষ সময়ে আবার ফেরত আসবেন।
.
৬৪ সালে ইহুদী রুল জারি করা হয় যে, সকল ইহুদিকে ৬ বছর বয়স থেকেই লেখাপড়া শিখতে হবে। তখন থেকেই ইহুদীরা লেখাপড়াকে খুবই গুরুত্ব সহকারে নিত। ৬৬ সালে রোমান সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে স্বাধীন রাষ্ট্র ইজরায়েল ঘোষণা করে ইহুদীরা। তখন তাদের সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয় এবং প্রায় ১ মিলিয়ন ইহুদী মারা যায়।
.
১৩১ সালে সম্রাট হাদ্রিয়ান ইহুদী ধর্ম নিষিদ্ধ করেন। জেরুজালেমের নাম পরিবর্তন করে রাখেন ইলিয়া কাপিতোলিনা। বাইতুল মুকাদ্দাসের জায়গায় জুপিটার মন্দির বসান। আর ইহুদী প্রদেশের নাম চেঞ্জ করে রাখেন “প্যালেস্টাইন” বা আরবিতে “ফিলিস্তিন”। তখন আবারো বিদ্রোহ করে ইহুদীরা, কিন্তু ব্যর্থ হয়।

৪র্থ শতকে সম্রাট কন্সটান্টিনোপল জাতীয় ধর্ম হিসেবে খ্রিস্ট ধর্ম ঘোষণা করার পর মরণাঘাত পায় ইহুদী ধর্ম। মোটামুটি বড় নিষেধাজ্ঞা নেমে আসে ইহুদীদের উপর।

৬১১ সালের দিকে পারস্য সাম্রাজ্যের অধীনে পড়ে ইহুদীরা। ওদিকে বাইজান্টিন সম্রাট হেরাক্লিয়াস/হারকিউলিস কথা দেন তিনি ইহুদী অধিকার ফিরিয়ে দেবেন, কিন্তু দেননি। ইসলামী বিশ্বাস মতে, ৬১১ সালের এক রাতে মুহাম্মাদ (স) মিরাজে জেরুজালেম গিয়েছিলেন, এবং সেই ধ্বংসপ্রাপ্ত জেরুজালেমের বাইতুল মুকাদ্দাসের ওখানে নামাজ পড়েন। ৬৩৪-৩৬ সালে মুসলিম বাহিনী জেরুজালেম অধিকার করে নেয়। ক্রুসেডের আগ পর্যন্ত খুলাফায়ে রাশেদিন এর শাসন করেন মদিনা থেকে। ৬৯১ সালে আব্দুল মালিক আজকের সেই সোনালি গম্বুজ নির্মাণ করেন। আর ৭০৫ সালে বানানো হয় মসজিদুল আকসা।
.
১০৯৯ সালে প্রথম ক্রুসেডে খ্রিস্টানরা জেরুজালেম দখল করে নেয়। কিন্তু ১১৮৭ সালে সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবি আবার দখন করে নেন জেরুজালেম। এ সময় পর্যন্তও ইহুদীরা ইসরাইলেই বসবাস করত। কিন্তু পরবর্তীতে ধীরে ধীরে ইউরোপে জায়গা করে নিতে থাকে তারা।
.
ইউরোপের ব্ল্যাক ডেথ মহামারির সময় ইহুদীদের অনেককেই খুন করা হয়, সন্দেহ ছিল- তারা বুঝি কুয়ার পানিতে বিষ মেশাচ্ছে। আর স্পেনে খ্রিস্টান রাজত্বে মুসলিম আর ইহুদী দু’ধর্মের মানুষকেই মারা শুরু হয়ে যায়, যার নাম কুখ্যাত স্প্যানিশ ইনকুইজিশন। ততদিনে ১৪৯৭ সাল চলে এলো। ইহুদীরা পালিয়ে রোম, পোল্যান্ড, কিংবা উসমানী সাম্রাজ্যে চলে যায়। ১৫৩৮ সালে সুলতান সুলেমান জেরুজালেম ঘিরে বিখ্যাত দেয়াল তুলে দেন। যেটা এখন ‘ওয়াল অফ জেরুজালেম’ নামে পরিচিত।
.
এরপর কালের বিবর্তনে ১৯ শতকে ইহুদীরা ইউরোপে অধিকার পেতে শুরু করল। তখন অর্ধেক ইহুদিই থাকতো রুশ রাজ্যে। এই রাশিয়ান ইহুদীরা ১৮৮২ সালে হোভেভেই জিওন (“জিওনের জন্য ভালোবাসা”) নামের আন্দোলন শুরু করে। জিওন বা জায়ন হলো জেরুজালেমের এক পাহাড়। মূলত জেরুজালেম ফিরে পাবার জন্য এক আন্দোলনের সূচনা সেটা, জায়োনিস্ট আন্দোলন। তারা মৃত হিব্রু ভাষা জীবিত করতে শুরু করল।

১৮৯৬ সালে Theodor Herzl দ্য জুইশ স্টেট নামে এক লিখনি প্রকাশ করেন যাতে তিনি বলেন, ক্রমবর্ধমান ইউরোপীয় ইহুদীবিদ্বেষের একমাত্র সমাধান আলাদা এক ইহুদী রাষ্ট্র। ১৮৯৭ সালে জায়োনিস্ট সংঘ গড়ে তোলা হয়। প্রথম জায়োনিস্ট কংগ্রেসে লক্ষ্য ধার্য করা হয়, প্যালেস্টাইনে ইহুদি রাষ্ট্র করে তুলতে হবে।
.
সাইকস-পিকট চুক্তি
১৯১৬ সালের ১৬ মে যেদিন ‘সাইকস-পিকট চুক্তি’ (Sykes-Picot Agreement) কার্যকর হয়েছিল। পৃথিবীতে তখন শক্তিধর দেশগুলো দুই শিবিরে বিভক্ত- মিত্রশক্তি (Allies) ও কেন্দ্রশক্তি (Central Powers)।
.
১৯১৫ সালের শেষের দিকে ঘটনা। তখনও বিশ্বযুদ্ধের জয়-পরাজয়ের কোনো রূপরেখা ফুটে ওঠেনি। এরই মধ্যে যুদ্ধোত্তর মধ্য-প্রাচ্য ভাগাভাগিতে নেমে পড়ে সে সময়ে মিত্রশক্তির দুই প্রভাবশালী দেশ যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স। পরে রাশিয়া এই ভাগাভাগিতে অংশগ্রহণ করে। মধ্যপ্রাচ্য এ ভাগাভাগির মূল দায়িত্ব এসে পড়ে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের দুই কূটনীতিকের উপর। এদের একজন মার্ক সাইকস (Mark Sykes) আর অন্যজন জর্জ পিকট (Georges-Picot)। এদের মধ্যে কর্নেল সাইকস ভাড়াটে বৃটিশ কূটনীতিক আর পিকট ছিলেন ‘অপরিণত’ পেশাদার ফরাসি কূটনীতিক। সামরিক-বেসামরিক যৌথ মস্তিস্কে মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসে জঘণ্যতম যে গোপন দলিল লেখা হয়েছিল তা ‘সাইকস-পিকট চুক্তি’ (অফিশিয়ালি ‘এশিয়া মাইনর চুক্তি’) বা মধ্যপ্রাচ্য ভাগাভাগির গোপন চুক্তি নামে পরিচিত। রাশিয়ার বলশেভিক আন্দোলনের (১৯১৭) নেতারা (ভি আই লেলিন) এ চুক্তি গ্রহণ করেনি বলে তা তারা প্রকাশ করে দিয়েছিল।
.
সাইকস ও পিকট মিলে ভূ-মধ্যসাগরের উপকূল থেকে শুরু করে ইসরাইলকে দু’ভাগ করে সিরিয়া-জর্ডানের সীমারেখা ধরে সোজাসুজি ইরাকের মসুল নগরীর নীচ ও কিরকুকের উপর দিয়ে ইরানের সীমান্ত পর্যন্ত মোটামুটি একটি সরল রেখা টেনে মধ্যপ্রাচ্যকে দু’ভাগে বিভক্ত করে। উপরের অংশে অবস্থিত তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাংশ, সিরিয়া, ইরাকের মসুল, লেবানন চলে যায় পিকটের (ফ্রান্সের) পকেটে আর নিচের ইসরাইলের দক্ষিণাংশ, জর্ডান, ইরাক, কুয়েত ও সৌদি আরবের পারস্য উপকূলীয় অংশ নেয় সাইকস (যুক্তরাজ্য)। এ ভাগাভাগিতে রাশিয়ারও একটা অংশ ছিল। সে তুরস্কের পশ্চিমাংশ ও ইস্তানবুল নিয়ে নেয়। চুক্তির বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে আরেক মিত্রশক্তি ইটালি শেষমেষ (১৯১৭ সালে) তুরস্কের দক্ষিণে ভূ-মধ্যসাগরের উপকূলীয় ভূ-খণ্ডটুকু নিয়ে নেয়। এভাবে সাইকস-পিকটের এক চুক্তিতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষে তুরস্ক থেকে মধ্যপ্রাচ্য (উত্তর আফ্রিকা ও সৌদি আরবের অধিকাংশ ভূ-খণ্ড বাদে) চার মিত্রশক্তির করতলে চলে আসে। এর পরের একশো বছর শুধুই রক্তপাতের ইতিহাস।
.
বেলফোর ঘোষণা :
জায়োনিজম আন্দোলনকারীরা চাচ্ছিল আমেরিকা আর ব্রিটেনের সমর্থন পেতে। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী লয়েড জর্জ ইতোমধ্যে সহানুভূতি দেখিয়েছিলেন। ১৯১৭ সালে ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লর্ড বেলফোর ইহুদী কমিউনিটির নেতা রথসচাইল্ডকে চিঠি দেন, যা বেলফোর ডিক্লেরেশন নামে পরিচিত। বেলফোর ঘোষণা হলো প্যালেস্টাইনে ইহুদিদের স্থায়ী আবাসভূমির অঙ্গীকার করে বৃটেনের প্রতাপশালী ইহুদি নেতা ওয়াল্টার রথসচাইল্ডকে লেখা বৃটিশ পররাষ্ট্র সচিব আর্থার জেমস বেলফোরের এক চিঠি। চিঠিতে বেলফোর লিখেছিলেন- “His Majesty’s Government view with favor the establishment in Palestine of a national home for the Jewish people”। বেলফোর ঘোষণার পরোক্ষ সমর্থন ১৯২২ সালে League of Nations দিয়ে দেয়। এরপর ধীরে ধীরে ইহুদীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। ব্যয়ভার বহন করে সাহায্য করত জ্যুইশ ন্যাশনাল ফান্ড, বিদেশি জায়োনিস্টরা এতে সাহায্য করত।
.
১৯২৮ সালে JNC (Jewish National Council) গঠিত হয় ফিলিস্তিনে। ১৯২৯ সালে প্রথম বড় ইহুদী-মুসলিম দাঙ্গা হলো জেরুজালেমের ওয়েইলিং ওয়াল (বুরাক দেয়াল) নিয়ে। ফলে ১৯৩১ সালে জায়োনিস্টরা ইর্গুন জাই লিউমি নামে এক মিলিশিয়া প্রতিষ্ঠা করে। এরপর শুরু হয়ে গেল সেকেন্ড ওয়ার্ল্ড ওয়ার, প্রায় ছয় মিলিয়ন ইহুদী হত্যা করে নাৎসিরা। মোটামুটি এই যুদ্ধের শেষ হবার মধ্য দিয়ে আমেরিকার ইহুদীরা জায়োনিস্ট মুভমেন্টের মাথা হয়ে দাঁড়ায়।
এদিকে ইহুদী সন্ত্রাসী সংগঠন ইর্গুন জাই লিউমি ১৯৪৬ সালে জেরুজালেমের কিং ডেভিড হোটেলে বোমা বিস্ফোরণ করে এবং ১৯৪৮ সালে ইহুদী অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে দেইর ইয়াসিন গ্রামে গণহত্যা করে।
.
কিং ডেভিড হোটেলের নিকটে ফিলিস্তিনের British administrative headquarters ছিল। সে হামলায় মারা যায় ৯১ জন মানুষ, আর আহত হয় ৪৬ জন। ইর্গুন সন্ত্রাসীরা আরবদেশী ওয়ার্কার আর ওয়েইটার সেজে বোমা পেতে আসে। তখন তেল-আবিব (যেটা বর্তমানে ইজরায়েলের রাজধানী) শহরে কারফিউ জারি করা হয়। ফিলিস্তিনের প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার ইহুদিকে জেরা করা হয়। ১৯৪৭ সালে ব্রিটেনের লেবার সরকার এই সংকটটি সদ্য গঠিত জাতিসংঘকে হ্যান্ডেল করবার জন্য প্রস্তুত হয়।
.
১৯৪৭ সালের ১৫ মে গঠিত হয় United Nations Special Committee on Palestine (UNSCOP) যা পরে প্রস্তাব দেয় “স্বাধীন এক আরব রাষ্ট্র, স্বাধীন এক ইহুদী রাষ্ট্র এবং জেরুজালেম শহর”- এই তিন ভাগ। সামান্য কিছু এদিক-ওদিকের মাধ্যমে জাতিসংঘের জেনারেল অ্যাসেম্বলিতে এই প্রস্তাব বিষয়ে ভোট হয়। ফলাফল স্বরূপ, ইহুদী সমাজে উচ্ছ্বাস আর আরব সমাজে অসন্তুষ্টি ছড়িয়ে পড়ে।
ঐ অঞ্চলে দাঙ্গা শুরু হয়ে যায়। প্রায় ১ লাখ আরব ইহুদীপ্রধান এলাকা ছেড়ে চলে যায়। আমেরিকা তখন ফিলিস্তিন ভাগ করার প্রস্তাব থেকে সমর্থন গুটিয়ে নেয়, কিন্তু ৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৮ তারিখে ব্রিটেন নতুনতর সাপোর্ট দেয়।
.
জায়নিস্ট নেতা ডেভিড বেনগুরিওন বাধ্যতামূলক করলেন সকল ইহুদী নারীপুরুষকে মিলিটারি ট্রেনিং নিতে হবে। ১৯৪৮ সালের ১৪ মে, শেষ ব্রিটিশ সামন্ত এই এলাকা ছেড়ে চলে যায়। সেদিন তেলআবিব মিউজিয়ামে জ্যুইশ পিপলস কাউন্সিল জড়ো হয় এবং ইসরায়েল রাষ্ট্রের অস্তিত্ব ঘোষণা করে। সাথে সাথে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান এবং সোভিয়েতের স্টালিন স্বীকৃতি দেয় ইজরায়েলকে। তবে আরব লিগের মিসর, জর্ডান, সিরিয়া, লেবানন, ইরাক প্রত্যাখ্যান করে।
.
আরব রাষ্ট্রগুলো তখন ফিলিস্তিনের দিকে এগিয়ে যায় এবং শুরু হয় প্রথম আরব-ইজরায়েল যুদ্ধ। আরব রাষ্ট্রগুলো অ্যাটাক করে, কিন্তু সদ্যজাত ইজরায়েলের তখনও কোনো ভারি অস্ত্র ছিল না। তখন জাতিসংঘ অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা জারি করে এ অঞ্চলে ইজরায়েলকে রক্ষা করতে। কিন্তু চেকোস্লোভাকিয়া সেই ব্যান ভঙ্গ করে ইজরায়েলকে অস্ত্র সাপ্লাই দেয়। এমতাবস্থায় এক মাসের শান্তিচুক্তিতে বাধ্য করে জাতিসংঘ।
.
তবে মারা যায় ইসরায়েলের ৬,০০০ মানুষ। যেখানে মোট জনসংখ্যা ছিল সাড়ে ছ লাখ। ৭ লাখ ২৬ হাজার ফিলিস্তিনি দেশছাড়া হয়। ১৯৪৯ এর ১১ মে জাতিসংঘে সদস্যপদ পেয়ে যায় ইজরায়েল।
.
ইজরায়েলের সংসদ “নেসেত” [Knesset] প্রথম মিলিত হয় তেলআবিবে, এরপর ১৯৪৯ সালের সিজফায়ারের পর চলে যায় জেরুজালেমে। প্রথম নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে ইজরায়েলের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন ডেভিড বেনগুরিওন। ১৯৫১ সালের মাঝেই ইমিগ্রেশনের কারণে ইজরায়েলের জনসংখ্যা হয়ে গেল দ্বিগুণ। ১৯৫৮ সালে সংখ্যাটা দাঁড়ায় বিশ লাখে।
.
১৯৫৬ সালে সুয়েজ খালজনিত জটিলতায় ইজরায়েল মিসর আক্রমণ করে বসে। ইজরায়েলের মিত্র ছিল ব্রিটেন আর ফ্রান্স। এতে প্রবল নিন্দার ঝড় ওঠে। এ সময়টাতে ইজরায়েল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইহুদী হত্যাকারী নাৎসিদের খুঁজে বের করে হত্যা করতে থাকে, বা মৃত্যুদণ্ড দিতে থাকে। দুর্ধর্ষ ইজরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের তৎপরতা ওঠে তুঙ্গে।
.
১৯৬৭ সালে ছয় দিনের আরব ইজরায়েল যুদ্ধ চলছিল। ৮ জুন তারিখে ইজরায়েল এয়ার ফোর্স আর নেভি মোটর টর্পেডো বোট মার্কিন জাহাজ ইউএসএস লিবার্টি আক্রমণ করে বসে। মারা যায় ৩৪ ক্রু, আহত হয় ১৭১ ক্রু। ইজরায়েল দুঃখ প্রকাশ করে বলে, মিসরীয় জাহাজ ভেবে আক্রমণ করে ফেলেছিল। ইজরায়েল সরকার তিন দফায় ক্ষতিপূরণ দেয় সে ঘটনায় নিহতদের জন্য। যদিও তদন্ত রিপোর্ট বলে এটা ভুল বোঝাবুঝি ছিল, তবুও বেঁচে যাওয়া আক্রান্তদের মতে, এটা নাকি ইচ্ছাকৃত ছিল!
.
১৯৬৮ সালের মার্চে ইজরায়েলি ফোর্স অ্যাটাক করে ফিলিস্তিনি বাহিনী ফাতাহকে। তবে ফাতাহ আর পিএলও (Palestine Liberation Organization) তখন আরব জুড়ে নাম করে ফেলে। ১৯৬৯-১৯৭০ সালে আবারো মিসরের সাথে ইজরায়েলের যুদ্ধ লেগে যায়। ১৯৬৯ এর ডিসেম্বরে ইজরায়েল এর নেভি ৫জন সোভিয়েত সেনাকে মেরে ফেলে যারা সাহায্য করছিল মিসরকে। তখন পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যায় ইজরায়েলের জন্য। পরিস্থিতি ঠাণ্ডা করতে আমেরিকা কাজ করতে থাকে, ১৯৭০ সালের অগাস্টে সিজফায়ারে রাজি হয় উভয় পক্ষ। তখন মিসরের প্রেসিডেন্ট নাসের।
.
১৯৭২ সালে মিউনিখ অলিম্পিকের সময় ইজরায়েলের টিমের ১১ জনকে ফিলিস্তিনি Black September Organization (BSO) জিম্মি করে। জার্মান তৎপরতায় আটজন কিডন্যাপারের পাঁচজনই মারা যায়, আর সাথে খেলোয়াড়রাও। তবে বাকি ফিলিস্তিনিদের জার্মান সরকার ছেড়ে দেয় এক হাইজ্যাক হওয়া বিমানের হোস্টেজ মুক্ত করতে। ইজরায়েল সরকার এর জবাব দেয় বোমা বিস্ফোরণ, গুপ্তহত্যা আর লেবাননে পিএলও হেডকোয়ার্টারে হামলার দ্বারা। হামলার নেতৃত্ব দেন এহুদ বারাক, যিনি পরে গিয়ে ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন।
.
১৯৭২ সালে মিসরের প্রেসিডেন্ট হয়ে এলেন আনোয়ার সাদাত। এরপর ইয়ম কিপুর যুদ্ধে মিসর আর সিরিয়া মিলে সারপ্রাইজ অ্যাটাক করে ইজরায়েলকে। তবে মিত্রের সহায়তায় ইজরায়েল ভালো মতই যুদ্ধে ব্যাক করে। এ যুদ্ধের ফলে সৌদি সরকার ১৯৭৩ এর তেল সংকট সূচনা করে।

https://www.englishgrammarsite.com/2020/08/effective-sentence.html
https://www.englishgrammarsite.com/2022/03/all-about-completing-sentences.html
https://www.englishgrammarsite.com/2020/12/rules-of-changing-voice-active-to-passive.html
https://www.bcspedia.com/2022/03/for-those-44th-bcs-is-1st-bcs.html

https://www.bcspedia.com/2022/03/gaza-strip-and-west-bank-of-palestine.html

🅻🅰🅱🅴🅻🆂


বাংলাদেশ বিষয়াবলি

বাংলা ভাষা সাহিত্য

গাণিতিক যুক্তি

ইংরেজি ভাষা সাহিত্য

ভাইভা বোর্ড

বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্ন সমাধান

পরামর্শ V. V. V. I.

ভূগোল (বাংলাদেশ বিশ্ব) পরিবেশ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা

সাধারণ বিজ্ঞান

হ্যান্ডনোট এবং তথ্যবহুল চিত্র

আন্তর্জাতিক

জাতীয়

পরামর্শ

পাঁচমিশালী তথ্য + সাধারণ জ্ঞান

বাংলা ব্যাকরণ

সাধারণ জ্ঞান

বাংলা সাহিত্য

বিসিএস পরামর্শ

কম্পিউটার তথ্যপ্রযুক্তি

নৈতিকতা মূল্যবোধ সুশাসন

English Grammar

গুরুত্বপূর্ণ শব্দ পরিচিতি

বিগত পরীক্ষাসমূহ

মডেলটেস্ট

মানসিক দক্ষতা

Vocabulary

অনুপ্রেরণা

ফাঁদ প্রশ্ন

বানান শুদ্ধিকরণ

মুক্তিযুদ্ধ

সংবিধান

সাধারণ বিজ্ঞান

ICT

One Word Substitution

Redundancy বাহুল্য (দোষ)

Spoken English

আইনকানুন

আন্তর্জাতিক বিষয়: সীমারেখা

আপডেট

আপডেট তথ্য

আবিষ্কার আবিষ্কারক

আলোচিত ১১ জন কবি-সাহিত্যিক তাঁদের রচনাবলী

ইংরেজি

ইংরেজি সাহিত্য

উপাধি ছদ্মনাম

এটর্নি জেনারেল

কম্পিউটার তথ্য প্রযুক্তি

গণিত

গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন

চর্যাপদের কবিগণ

জ্ঞান-বিজ্ঞানের শাখা এবং জনক

জ্যামিতিক সূত্র

দেশী বিজ্ঞানীরা

নদ-নদী

পত্রিকা এবং ছদ্মনাম

পরিবেশ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা

পরিমিতির (Mensuration) সূত্রাবলিসমূহ

পারিভাষিক শব্দ

পুরাতন নতুন নাম

ফলা এবং যুক্তাক্ষর

ফ্রান্সের ইসলাম-বিদ্বেষ

বাংলা

বাংলা ইংরেজি সাহিত্যের মিলবন্ধন

বাংলা ভাষা সাহিত্য

বাংলাদেশ বিশ্বপরিচয়

বাগধারা

ভাষা আন্দোলন

ভূগোল

ভৌগোলিক উপনাম

মডেল টেস্ট

মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক সাহিত্যকর্ম

লিখিত পরীক্ষা

লেখা লেখক

শ্রেষ্ঠ বাঙালি

সংবিধান সংশোধনী

সদর-দপ্তর

সভ্যতা

সমাস

সাজেশন

সাম্প্রতিক

সাহিত্য-উৎসর্গ

সাহিত্যে কনফিউশন

স্থাপত্য স্থপতি

স্পোকেন ইংলিশ

. আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি

৪০০টি প্রশ্নোত্তর: কম্পিউটার এবং কম্পিউটার-প্রযুক্তি

৫২ থেকে ৭১

মার্চ