বৃটিশরা কেন আলাদা?কেন তারা অন্যদের চেয়ে হাজার বছর এগিয়ে?
হুমায়ুন কবির বাদশা
সহকারি কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট
(বৃটিশরা ভালো কিংবা মন্দ যাই করেছে, সেগুলোর প্রভাব হাজার হাজার বছর পরে কি হতে পারে সেই কথা চিন্তা করেই করেছে।)
বৃটিশদের আমরা উপনিবেশিক বলে গালি দিয়ে থাকি কিংবা বৃটিশদের বিরুদ্ধে নেতিবাচক ধারণা নিয়ে গড়ে উঠি কেননা ১৭৫৭ সাল থেকে ১৯৪৭ পর্যন্ত আমরা তাদের অধীনে ছিলাম।তবে মূলত বৃটিশ শাসন শুরু হয় ১৮৫৭ সালের পর থেকে, আর ১৭৫৭ সাল থেকে ১৮৫৭ পর্যন্ত চলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন।বৃটিশদের সম্পর্কে আমাদের নেতিবাচক ধারণা থাকলেও এ কথা কোনভাবে অস্বীকার করা যায় না যে দেশ চালানোর জন্য যে আইন লাগে, সে আইনগুলো বৃটিশদের থেকেই আমরা পেয়েছি।১৮৩০ সাল থেকে ১৮৬০ সাল পর্যন্ত এ অঞ্চলের মানুষদের কেমন চাল-চলন,অভ্যাস,রীতি-নীতি এবং সংস্কৃতিসহ প্রায় সকল দিক তারা স্টাডি এবং অবজার্ভ করে আইনগুলো করে।আর আইনগুলো দেখে সত্যিই বিস্মিত হয়েছি।বৃটিশদের তৈরি করা এমনভাবে লেখা যে আজ থেকে ২০০০ বছর পরেও মনে হয় না এর কোন সংশোধন প্রয়োজন হবে।তবে সেই সময় টাকার মূল্য বেশি ছিল কিন্তু এখন দাম কমে গেছে বলে শুধু জরিমানার ক্ষেত্রে টাকার পরিমাণটা বাড়ানো দরকার।আর এই আইনগুলো উপমহাদেশের যে দেশেই একটু পরিবর্তন করা হয়েছে যেখানে Defect আছে।কিন্তু বৃটিশ আইনগুলোর একটি বাক্য ত দূরের কথা একটি শব্দও পরিবর্তন করার মত না।বৃটিশরা Substantive Law (The Penal Code এর ভেতর রয়েছে অপরাধের Definition এবং শাস্তির পরিমাণ ও মেয়াদ)। আর এই শাস্তি বাস্তবায়নের জন্য তারা ১৮৬০ থেকে আরো ৪০ বছর পর ১৮৯৮ তৈরি করে Procedural Law (CrPC) আর এর পর Substantive এবং Procedural Law এর সমন্বয়ে তারা তৈরি করে Adjective Law (The Evidence Act)।এবং মানুষের অনার,রাইটস এবং টাইটেল এর অধিকার প্রতিষ্টার জন্য তৈরি করে দেওয়ানি কার্যবিধি( CPC)।এভাবেই তারা একের পর এক আইন তৈরি করে।আর সে সময়কার অবস্থা কেমন ছিল তা একটি উদাহরণ দেখলেই বোঝা যাবে।একবার রেল লাইনের স্লিপারের নাট ঢিলা হয়ে গিয়েছিল।অথচ কোন চোর সাহস পাই চুরি করে নিয়ে যাওয়ার কারণ চুরি করলেই ধরা পড়তে হবে।বঁাচার কোন উপাই নেই।আর বর্তমানে ইংল্যান্ডে আইনগুলো বাস্তবায়নের জন্য প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।আর এই সিস্টেমটা এমনভাবে ডেভেলপ করা হয়ে যে এই সিস্টেম মানুষ মানতে বাধ্য আর আর সিস্টেম মানলেই অপরাধ করার কোন সুযোগ নেই।অর্থাৎ সিস্টেমই মানুষকে সোজা পথে পরিচালিত করে।যেমন কেউ যদি নির্দিষ্ট গতির চেয়ে বেশি গতিতে গাড়ি চালায়, তাহলে সে ধরা পড়বে।সে গাড়ি চালাতে পারবে না।গাড়ি ছাড়া ইংল্যান্ডে মানুষ অনেকটা অচল, তাই মানুষ বাধ্য হয়েই নির্দিষ্ট গতির চেয়ে বেশি গতিতে গাড়ি চালাই না।আবার একই কারণে মানুষ এলকোহল খেয়ে গাড়ি চালাই না।কারণে একটু ভুল হলেই ধরা পড়তে হবে।আর সবশেষে বলব ভুমি ব্যবস্থাপনা নিয়ে।আমাদের ভূমি ব্যবস্থাপনার মাদার ল হচ্ছে The State Acquisition and the Tenancy Act-1950। এটাও বৃটিশদের তৈরি।আমাদের জমির মালিকানাই থাকত না এই আইনটি না হলে।আর বৃটিশ ভূমি ব্যবস্থাপনার জন্য এক আশ্চর্য অবদান হছে সিএস জরিপ।এত বছর আগে এই জরিপটি হলেও এটি একেবারে নিখুঁত। যদি অন্য জরিপে কনপিউশন দেখা দেয়,তাহলে এটিকেই স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে বিবেচনা করা হয়।বৃটিশদের নিয়ে এত ভালো লেখার অর্থ এই নয়,যে তাদের খারাপ দিক ছিল না।হা তাদের বেশ কিছু খারাপ দিকও ছিল।তবে তারা যে খারাপ কাজগুলো করেছে, সেগুলোও দীর্ঘমেয়াদী চিন্তা করেই করেছে।যেমন:পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তান জিওগ্রাফিক্যালি ১৫০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। অথচ তারা এই দুই অংশ মিলে একটা দেশ করে।ফলে সংঘাত অনিবার্য ছিল।আবার কাশ্মীরকে অমিমাংসিত রাখা। আমরা সকলেই জানি এখন কি হচ্ছে সেখানে। তাই এই আলোচনার মাধ্যমে বোঝা যায়, বৃটিশরা দূরদর্শী জাতি।