৪০তম বিসিএস লিখিত প্রস্তুতি
বই পড়া ভারি মজা-২১
বইয়ের নাম : নিষিদ্ধ লোবান
টাইপ : বড় ধরনের গল্প ( এক অর্থে উপন্যাস) । মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস
লেখক: সৈয়দ শামসুল হক
রিভিউ : Meghpori Mashruka
ঈদের ছুটিতে এক রাতেই পরে শেষ করলাম এই বইটি। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক যে কয়েকটি উপন্যাস পড়েছি এটা তার মধ্যে ব্যতিক্রম। সেটা এই অর্থে যে, সবগুলো উপনাসই পুরুষ কেন্দ্রিক। নারীর উল্লেখ কেবলমাত্র বীরাঙ্গনা কিংবা ভয়ে পালিয়ে বেড়ানো অসহায় হিসেবে। কিন্তু এই উপন্যাসে নারী চরিত্রটি শুধু প্রধান চরিত্রই নয়, সে সাহসী, সুদৃঢ়, কুশলী এবং সবশেষে মুক্তিযোদ্ধা।
এখানে উপন্যাসের কাহিনী শুরু হয়েছে বিলকিসের ট্রেনে জলেশ্বরী যাবার দৃশ্য দেখিয়ে। কিন্তু তার গন্তব্যের অনেক আগেই নবগ্রাম স্টেশনে ট্রেন থেমে যায়। তাকে জানানো হয় ট্রেন আর যাবে না। কিন্তু তাকে তো যেতেই হবে। মা-ভাই-বোনের চিন্তায় অস্থির বিলকিস একাই রওয়ানা দেয়, পায়ে হেঁটেই সে যাবে। তার সঙ্গী হয় সীরাজ অথবা প্রদীপ নামের একটি বালক অথবা কিশোর, যে মেয়েটির চেয়ে অনেক ছোট। তাকে নিয়েই গ্রামে পৌঁছে বিলকিস। সেখানে জানতে পারে, তার মা আর বোন নদী পার হয়ে অপর পাড়ে আশ্রয় নিয়েছে। আর তার ভাই ও গ্রামের আরো অনেককে মিলিটারিরা বাজারে নিয়ে লাইনে দাঁড় করিয়ে মেরে ফেলেছে। এবং হুকুম দিয়েছে লাশ যেখানে আছে সেখানেই থাকবে। দাফন হবে না। কেউ লাশ সরাবার চেষ্টা করলে গুলি করা হবে।
ভাইয়ের লাশ দাফনের জন্য রাতের আঁধারে বাজারে গিয়ে উপস্থিত হয় বিলকিস ও সিরাজ। হতবাক বিলকিসের কথা নাড়া দেয় হৃদয়,"এত লাশ, সিরাজ!"
শোকে বিহ্বল বিলকিস সিদ্ধান্ত নেয় সে সব লাশ দাফন করবে। সারারাত অভুক্ত দুটি মানুষ অদম্য সাহস আর শক্তিতে বাজারের পাশেই গর্ত খুঁড়ে কিছু মানুষকে ফেলে। সকাল হলে তারা বাজারের একটি ঘরে লুকিয়ে থাকে। আমরা তখন জানতে পারি সিরাজ আসলে প্রদীপ কুমার বিশ্বাস, যে তার বাবা-মাকে হারিয়েছে, বোনকে হারিয়েছে, তার নাম-পরিচয় হারাতে বাধ্য হয়েছে। তার দৃঢ় বিশ্বাস সে আবার সব ফিরে পাবে। বিলকিসও নিজের নিখোঁজ স্বামীর কথা ভেবে চিন্তিত হয়।
সকালে মিলিটারিরা টের পেয়ে যায় তাদের কাজ। ফলে পরের রাতেই তারা ধরা পরে যায়। তাদের নিয়ে আসা হয় স্থানীয় ছাউনির অধিনায়ক মেজরের কাছে। তারা নিজেদের ভাই-বোন পরিচয় দেয়। দু'জনকে একসাথে আবার আলাদা আলাদা প্রশ্ন করতে থাকে। কিন্তু তাদের মনঃপুত হয় না। আর মেজরের চোখ থাকে বিলকিসের শরীরে। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তাদের পোশাক খুলে ফেলা হয়। তখন ওরা জানতে পারে সিরাজ হিন্দু। তাকে মেরে ফেলা হয়। যদিও বিলকিসকেও ওরা হিন্দু মনে করে, কিন্তু ওর শরীরের লোভ সামলাতে পারে না মেজর। বিলকিস শর্ত দেয় প্রদীপকে নদীর তীরে পোড়ানোর ব্যবস্থা করতে। পরদিন সকালে মেজর বিহারি কিছু লোককে নিয়ে বিলকিস সহ নদী পাড়ে পৌঁছে। পোড়ানো হয় প্রদীপের লাশ। বিলকিসকে চিতার পাশে দেখে এগিয়ে আসে মেজর। ডাকে তাকে। কিন্তু বিলকিস নির্বিকার। সে মেজরকে টেনে চেপে ধরে আগুনে। তার গায়েও আগুন ধরে যায়। কিন্তু শরীরের সব শক্তি দিয়ে মেজরকে চেপে ধরে রাখে সে।
নারী শুধু সহ্য করে না, শুধু ভয় পায় না। মাঝে মাঝে জ্বলেও উঠতে পারে, হোক সেটা কেবলমাত্র মুখে ডাকা ভাইয়ের জন্য। এরকম কত নারীর সাহসীকতায় উজ্জ্বল হয়েছে আমাদের পতাকা - কে জানে!